বিলকিস বানু মামলায় ধর্ষকদের মুক্তি, গুজরাট সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ
ভারতের বিলকিস বানু মামলায় গুজরাট সরকারকে নোটিশ পাঠালেন সুপ্রিম কোর্ট। বিলকিসকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার অভিযোগে দোষী ব্যক্তিদের মুক্তি প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এক শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেন, যে ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, এ মামলায় তাঁদের যুক্ত করতে হবে। মামলার আবেদনকারীদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহ পর এ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু ধর্ষণের শিকার হন। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে ধর্ষণ করার পাশাপাশি তাঁর তিন বছরের কন্যাসহ পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ১১ অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন। বোম্বে হাইকোর্টও সেই সাজা বহাল রাখেন।
১৫ আগস্ট স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ১৪ বছর সাজাপ্রাপ্ত ওই ১১ জনকে গুজরাট সরকার ক্ষমা প্রদর্শন করে মুক্তি দেয়। গুজরাটের গোধরা জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ওই অপরাধীদের ফুলের মালা পরিয়ে কপালে তিলক কেটে মিষ্টি খাইয়ে বরণ করা হয়। এ ঘটনা ভারতজুড়ে বিক্ষোভের জন্ম দেয়।
এরপর ২৩ আগস্ট গুজরাট সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সিপিএম নেত্রী সুভাষিণী আলী, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সাংবাদিক রেবতী লাল ও অধ্যাপক রূপরেখা ভার্মা। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা, বিচারপতি অজয় রাস্তোগী ও বিচারপতি বিক্রম নাথের এজলাসে আজ সেই মামলার প্রথম শুনানিতে গুজরাট সরকারকে নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি রমনা বলেন, তিনি কোথাও পড়েছেন সুপ্রিম কোর্ট নাকি মুক্তিদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ সর্বোচ্চ আদালত দেননি। রাজ্য সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট শুধু বিবেচনা করে দেখতে বলেছিলেন।
গত মে মাসে বিচারপতি রাস্তোগী ও বিক্রম নাথ জানিয়েছিলেন, শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রাজ্য সরকারের আছে। আবেদনকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বালের কাছে বিচারপতি রাস্তোগী জানতে চান, প্রতিদিন বহু অপরাধীর সাজা মওকুফ হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কী ঘটেছে? সিব্বাল ঘটনার নির্মমতা বিস্তারে বলতে গেলে বিচারপতি রাস্তোগী বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। অপরাধীদের শাস্তিও হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত ঠিক কি না। আইন মেনে সাজা মওকুফ করা হয়েছে কি না, সেটাই বিচার্য।’
এই অপরাধীদের মুক্তিদানের বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং লেগে গেছে। এ বছরের শেষে গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন। অপরাধীরা সবাই ব্রাহ্মণ। অভিযোগ রয়েছে, সেই সমাজের সমর্থন পেতে শাসক বিজেপি ব্যগ্র। তাই এ মুক্তি।
বিলকিস মামলায় অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছিলেন বিশেষ আদালতের বিচারপতি ইউ ডি সালভি। পরবর্তীকালে তিনি বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন। এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘মুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে গুজরাট সরকার কি সংশ্লিষ্ট বিচারপতির অভিমত নিয়েছিল।
উত্তর হলো, না। আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এ ধরনের ঘটনায় রাজ্য সরকার সাধারণত কেন্দ্রীয় সরকারের অভিমত গ্রহণ করে। গুজরাট সরকার কি তা করেছিল? আমার জানা নেই। যদি নিয়ে থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার কী বলেছিল?’ তিনি আরও বলেন, ‘বিধি মেনে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত কি না, বলতে পারব না।’
আরও পড়ুন: