এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গে ২৪ পরগনা
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আজ ভোরে পার্শ্ববর্তী কুলতলী এলাকার একটি জলাশয় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর অশান্ত হয়ে ওঠে জয়নগর। এ ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, চতুর্থ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী গতকাল শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে কোচিংয়ে যান। সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পরও বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী তার খোঁজ শুরু করে।
ভুক্তভোগীর বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোচিং থেকে ফেরার পথে বিকেল পাঁচটার দিকে সে আমার দোকানে এসেছিল। রাতে বাড়ি এসে শুনি, সে বাড়ি ফেরেনি। এরপর আমরা তার খোঁজ শুরু করি। পরবর্তী সময়ে আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে (কুলতলীতে) তার মরদেহ পাই।’
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামবাসীর অভিযোগ, গতকাল শুক্রবার রাতে মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার পর তারা অভিযোগ জানাতে মহিষমারী এলাকার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। পুলিশ তাদের জয়নগর থানায় যাওয়ার জন্য বলেন; কিন্তু তারাও নিখোঁজের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। এই পরিস্থিতিতে আজ ভোরে কুলতলীর একটি জলাশয় থেকে মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় সেখানে পুলিশ পৌঁছালে গ্রামবাসী বিক্ষোভ শুরু করেন।
একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ জনতা স্থানীয় মহিষমারী এলাকার পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়িয়ে দেয় একটি মোটরসাইকেল। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ মামলায় ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ গ্রেপ্তার হয়েছে। তিনি অপরাধ স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। স্থানীয় একটি হাসপাতালে শিশুটির মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে।
বারুইপুর জেলার পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুক্রবার রাত নয়টার দিকে আমরা খবর পাই। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযুক্ত তরুণ অপরাধ স্বীকার করেছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে গ্রামবাসী বিক্ষোভ শুরু করেন।’
এদিকে জয়নগর ও কুলতলী থানা এলাকা অশান্ত হয়ে উঠলে সেখানে ছুটে যান জয়নগরের সংসদ সদস্য প্রতিমা মণ্ডল। ক্ষুব্ধ জনতা প্রতিমা মণ্ডলকে দেখে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি তোলেন। কুলতলীর বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল ঘটনাস্থলে এলে ক্ষুব্ধ জনতার তাড়া খেয়ে পালিয়ে যান।
বিজেপি নেত্রী ও বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, সিপিএম নেতা ও সাবেক মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলি, সিপিএমের যুবসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় থেকে বিভিন্ন দলের নেতা–নেত্রীরা আজ সকালে ঘটনাস্থলে যান।
অগ্নিমিত্রা পাল ও মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় দাবি তোলেন, ওই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। একই সঙ্গে তাঁরা মৃতদেহ সংরক্ষণের দাবি তোলেন।
সম্প্রতি কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুরো পশ্চিমবঙ্গ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। চিকিৎসকেরা দফায় দফায় কর্মবিরতিতে যান। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে এখনো আন্দোলন চলছে।