কাশ্মীরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধে ৪ ভারতীয় সেনা নিহত

কাশ্মীরের ডোডায় রাস্তায় পুলিশের টহল। ১৬ জুলাইছবি: এএনআই

ভারতের জম্মু–কাশ্মীর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। একের পর এক জঙ্গি হানায় মারা যাচ্ছেন ভারতীয় জওয়ানেরা। গতকাল সোমবার রাতে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ডোডা জেলায় সেনাবাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে চার সেনাসদস্য নিহত হন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন।

নিহত সেনাসদস্যদের মধ্যে মেজর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁর নাম ব্রিজেশ থাপা। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা ব্রিজেশের বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ভুবনেশ থাপা।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ডোডা জেলার এক জঙ্গলে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিলেন ব্রিজেশ। সঙ্গে তাঁর বাহিনী। সেখানেই আত্মগোপন করে থাকা কিছু জঙ্গি অতর্কিতে গুলি চালায়। আধা ঘণ্টার সেই বন্দুকযুদ্ধে আহত হন ব্রিজেশসহ পাঁচ জওয়ান। হাসপাতালে আনার পর তাঁদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

সেনাসদস্যদের হতাহতের খবর পেয়েই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান।

পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ–ই–মুহাম্মদের ছায়া গোষ্ঠী কাশ্মীর টাইগার্স এই হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। এই গোষ্ঠীই ৯ জুলাই কাঠুয়ায় সেনাবহরে হামলা চালিয়েছিল। শুধু জম্মুতেই গত ৭৮ দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর ১১ বার গুরুতর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বারবার এমন হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী ও জয়রাম রমেশ। রাহুল আজ মঙ্গলবার বলেছেন, বারবার এমন ঘটনার জন্য দায়ী সরকারের নীতি। ভ্রান্ত সেই নীতির কুফল ভুগতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। একের পর এক হামলা বুঝিয়ে দিচ্ছে, জম্মু–কাশ্মীরের হাল ঠিক কেমন।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা দেশের ঐকবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে রাহুল ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে বলেন, দায় পুরোপুরি সরকারের। বারবার নিরাপত্তায় গলদ সরকারি নীতির ভুলভ্রান্তিগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও সরকারকে একহাত নিয়েছেন। ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে তিনি বলেছেন, জম্মু–কাশ্মীরে সেনাদের ওপর বারবার আক্রমণ হচ্ছে, জওয়ানেরা মারা যাচ্ছেন। অথচ সরকারের ভাবখানা এমন, যেন সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে।

কংগ্রেস সভাপতি বলেন, মিথ্যা বাহাদুরি, অসত্য আখ্যান ও সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। সেনাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে নিরাপত্তাব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন।

কংগ্রেসের মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সদস্য জয়রাম রমেশও মঙ্গলবার ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে সবার উচিত জোটবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। এটা ক্ষুদ্র রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার সময়। তবে একই সঙ্গে এই প্রশ্নও তোলা উচিত, স্বঘোষিত অজৈবিক প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) ও চাণক্য (অমিত শাহ) যেসব বড় বড় দাবি করেছিলেন, সেসবের কী হলো?’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার ভোট করার কথা। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাজ্য বিভাজন ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের পর জম্মু–কাশ্মীর ও লাদাখে লোকসভার ভোট হয়েছে। বিজেপি জম্মু ছাড়া কাশ্মীর উপত্যকায় প্রার্থী দেয়নি। উপত্যকায় তারা তাদের সমর্থক দলকে সমর্থন দিলেও সর্বত্র হেরেছে। এমনকি লাদাখের জেতা আসনও তারা হারিয়েছে।

এ অবস্থায় সরকার জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার ভোট করাতে আগ্রহী কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেছে। এমনও মনে করা হচ্ছে, সন্ত্রাসের দোহাই দিয়ে বিজেপি ও সরকার ভোট স্থগিত রেখে কেন্দ্রের শাসন কায়েম রাখতে আগ্রহী। কারণ, সরকার মনে করছে, ভোট হলে বিজেপি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দখল পাবে না।

ডোডায় হামলার পর আজ মঙ্গলবার শ্রীনগরে গণমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পিডিপি নেত্রী ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। জম্মু–কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক আর আর সোয়াইনকে তুলোধোনা করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে ঠেকেছে। অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। দিনরাত তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। বন্দুকের শাসন চলছে। পুলিশের মহাপরিচালক কাশ্মীরি জনগণের সঙ্গে পাকিস্তানিদের মতো আচরণ করছেন।

মেহবুবা বলেন, হুরিয়ৎ নেতারা হয় কারাগারে আছেন নতুবা মৃত। আমি বা ওমর আবদুল্লাহ কেউই ক্ষমতায় নেই। সবকিছু সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ জঙ্গিয়ানায় বিরাম নেই। জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে যেখানে সমর্থন করা দরকার, সেখানে উত্তর কাশ্মীরে ভোটে জিতলেন তিনি, যিনি বিচ্ছিন্নতাবাদের কথা বলে আসছেন। যিনি গণভোটের দাবিতে মুখর। এটা সরকারের ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার দায় পুলিশের মহাপরিচালকেরও। তাঁকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা দরকার।

পুলিশের মহাপরিচালক আর আর সোয়াইন গতকাল সোমবার বলেছিলেন, জম্মু–কাশ্মীরের নাগরিক সমাজে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটাতে পাকিস্তান সফল হয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর বদান্যতার দরুন। এসব তথাকথিত আঞ্চলিক দল নির্বাচনে জয়ী হতে সন্ত্রাসী সংগঠনের সাহায্য নেয়।