ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতাহীনতা নিয়ে ফের তোপ যুক্তরাষ্ট্রের
আরও একবার ধর্মীয় স্বাধীনতাহীনতা নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে তোপ দাগল যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। দেশে দেশে ধর্মাচরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর নজর রাখা এ সংস্থা তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কয়েক বছর ধরেই এ বিষয়ে তারা ভারতের কড়া সমালোচনা করে চলেছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এ সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ’-এর তালিকায় স্থান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তানসহ মোট ১৭টি দেশ এ তালিকাভুক্ত। ভারতের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়েছে জানিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও রাজ্য স্তরের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও ধর্মীয় বৈষম্য প্রকটতর হয়েছে।
ধর্মান্তরকরণ ও আন্তধর্মীয় সম্পর্কের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি গৃহীত হয়েছে। হিজাব ও গোহত্যা নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুসলমান, খ্রিষ্টান, শিখ, দলিত ও আদিবাসীদের মধ্যে। ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং তা খর্ব করা নিয়ে যাঁরা সরব হয়েছেন, তাঁদের ওপর কড়া নজরদারি রাখা ছাড়াও হয়রানি করা হচ্ছে। তাঁদের সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে। এমনকি অবৈধ কাজকর্ম রোধ আইনে (ইউএপিএ) অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকও করা হচ্ছে। যেসব বহুজাতিক বেসরকারি সংস্থা এসব নিয়ে সরব, তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনে (এফসিআরএ) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সংস্থা এর আগে সিএএ এবং এনআরসির কড়া সমালোচনা করেছিল। এবারেও সেই উল্লেখ রয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জো বাইডেন সরকারকে বলেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনে যেসব সংস্থা গুরুতরভাবে দোষী, ভারত সরকারের সেই সব সংস্থা ও তাদের কর্মকর্তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞাও জারি করা জরুরি। ভারতকে একটি ‘বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ’ বলে ঘোষণার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে। বলেছে, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যেন বিষয়টির অবতারণা করা হয়। ২০২০ সাল থেকে এই সংস্থা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একাধিক সুপারিশ যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে করে চলেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই সুপারিশ মেনে সক্রিয় হয়নি।
গত মঙ্গলবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এ বিষয়ে সরকারি প্রতিক্রিয়া জানান। এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে এ প্রতিবেদন নস্যাৎ করে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিবেদন পেশ করে ইউএসসিআইআরএফ নিজেই নিজেদের বদনাম করছে। প্রতিবেদন ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ জানিয়ে তিনি বিবৃতিতে বলেন, ভারতের গণতন্ত্র ও তার মূল্যবোধ, বহুত্ববাদিতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ওই সংস্থার আরও ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত।
ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, মানবাধিকার হরণ, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সংবাদপত্র ও প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, ঘৃণা ভাষণ এবং রাষ্ট্রীয় স্তরে দমন-পীড়নের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সময়ে সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সরব হয়েছে। ভারত সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে সেসব রিপোর্ট বা অভিমতকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’, ‘অভিসন্ধিমূলক’, ‘অজ্ঞানপ্রসূত’ বলেছে।
ফ্রিডম হাউস, ভি ডেম ইনস্টিটিউট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থা ভারতের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাহীনতা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন তুলে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এসব অভিযোগের বহর ও তীব্রতা বেড়ে চলেছে।
গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে এক তথ্যচিত্র সম্প্রচার করার পর সম্প্রতি বিবিসির বিরুদ্ধে ভারত সরকারের আয়কর বিভাগ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সক্রিয় হয়েছে। সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাও করা হয়েছে।