আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৬৭ সালের রায় খারিজ করলেন সুপ্রিম কোর্ট

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকছবি: রয়টার্স

ভারতের উত্তর প্রদেশে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যালঘু সংস্থার মর্যাদা পাবে কি না, তা ঠিক করবে সুপ্রিম কোর্টের এক নতুন তিন সদস্যের বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি সেই বেঞ্চ গঠন করবেন।

১৯৬৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু তকমা খারিজ করেছিলেন। সেই রায় আজ শুক্রবার খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ। সংখ্যাগরিষ্ঠ সেই রায়ে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু চরিত্র পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার ছিল প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের শেষ কর্মদিবস। রায় দিয়ে তিনি জানান, কোনো প্রতিষ্ঠানকে সংখ্যালঘু হিসেবে নির্ধারণ করতে যা যা খতিয়ে দেখা হয়, সেসব বিচার করে এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন তিন সদস্যের এক বেঞ্চ।

১৮৭৫ সালে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নাম ছিল মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ। ১৯২০ সালে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করে নামকরণ হয় আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৬৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়েই এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যালঘু তকমা হারিয়েছিল; কিন্তু ১৯৮১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে আইন সংশোধন করে তার সংখ্যালঘু চরিত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ১৯৮১ সালের সেই সংশোধনীকে অসাংবিধানিক অ্যাখ্যা দেন। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যালঘু সংস্থার মর্যাদা পেতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের সেই রায় আজ শুক্রবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ খারিজ করে দেন। ৪–৩ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের ৩০(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংখ্যালঘু মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। ওই অনুচ্ছেদে ভাষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি ও পরিচালনার অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেই সব বিষয় খতিয়ে দেখে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু চরিত্র নির্ধারণ করবেন তিন সদস্যের এক বেঞ্চ।

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না (পরবর্তী প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্র পক্ষে রায় দেন। বিপক্ষে রায় দেন তিন বিচারপতি সূর্য কান্ত, দীপংকর দত্ত ও সতীশ চন্দ্র।

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ১৮৭৫ সালে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্‌–স্বাধীনতা যুগে জাতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। তাই তা কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের জন্য বলা যেতে পারে না।

নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রথম থেকেই আলিগড় বা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে। সরকারের যুক্তি, সংসদে আইনের মাধ্যমে যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত, সেটিকে ধর্মের ভিত্তিতে বিশেষ তকমা দেওয়া দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরুদ্ধে।

সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধেক আসন সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সরকারের বক্তব্য, সেই কারণে ওই সব প্রতিষ্ঠানে তফসিল জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসর গোষ্ঠী জাতিগতভাবে কোনো সংরক্ষিত আসনের সুবিধা পান না।