চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড: পশ্চিমবঙ্গে আজ বিজেপির ১২ ঘণ্টার বন্ধ্, রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আজ বুধবার রাজ্য বিজেপির ডাকে ১২ ঘণ্টার বন্ধ্ পালিত হচ্ছে। কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি পালনের সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় এ বন্ধ্ ডাকা হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা দিয়েছেন, আজ সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলা বন্ধ্ চলবে। একই সঙ্গে তিনি দাবি তুলেছেন, এ রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাজ্যপাল যেন অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য সুপারিশ করেন।
৯ আগস্ট আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্যের নানা প্রান্তসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’-এর ডাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে কলকাতাজুড়ে বিক্ষোভ হয়। এদিন বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিমুখে যাত্রা করলে পুলিশ প্রতিবন্ধকতা বসিয়ে তাঁদের আটকে দেয়। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেলও ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশও লাঠিপেটা করে। সংঘর্ষের জেরে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় হাওড়া থেকে বেশ কিছু ট্রেনের চলাচলও। প্রিন্সেপ ঘাটে ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি।
রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গতকালের ঘটনায় ২২০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘর্ষে ১৫ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
গতকাল সাঁতরাগাছি, কোনা এক্সপ্রেস রোড, হাওড়া ব্রিজ, কলেজ স্কয়ার, ফোরশোর রোড, জিটি রোড, হাওড়া ময়দান, মহাত্মা গান্ধী রোড, কলেজ স্ট্রিট, ধর্মতলা, হাওড়া স্টেশন, মেছুয়াবাজার, বড়বাজার, বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট, ফিয়ার্স লেন, মেট্রোস্টেশন ও লালবাজার এলাকায় হয়েছে সংঘর্ষ।
রাজ্য বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এই বাংলার মানুষ দুর্নীতিবাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আর চায় না। মুখ্যমন্ত্রী নারী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাঁচাতে নানা খেলা খেলছেন। মানুষ আজ তা বুঝতে পেরে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।’
শুভেন্দু আরও বলেন, গতকাল ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি চলাকালে ১৩২ জন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন নারী। আহত ৩৫ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা সুপ্রতিম সরকারের দাবি, শান্তিপূর্ণ মিছিলের কথা বলে আন্দোলনকারীরা পরিস্থিতিকে অশান্ত করেছেন। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছেন। প্রতিবন্ধকতা ভেঙেছেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, ‘এ রাজ্যে বাংলা বন্ধ্ হবে না। মানুষ আর বন্ধে্ বিশ্বাসী নন। বন্ধ্ প্রতিহত করবে মানুষ।’ একই কথা বলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
অন্যদিকে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার চিকিৎসকের মা–বাবা বলেছেন, তাঁরা ছাত্র আন্দোলনের পাশে আছেন, তবে রাজনীতিতে নেই।
আজ বিজেপির ডাকে ১২ ঘণ্টা বন্ধ্ কর্মসূচির পাশে নেই আন্দোলনে থাকা চিকিৎসকদের স্বীকৃত সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফোরামও। ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং মূল হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার দাবি নিয়ে আজ তারা শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করবে।