পাবজি খেলতে খেলতে প্রেম, ভারতে এসে জেলে পাকিস্তানি গৃহবধূ

সীমা গুলাম হায়দার ও শচীন মীনা
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

জনপ্রিয় অনলাইন গেম পাবজি খেলতে গিয়ে পরিচয়। ধীরে ধীরে সে সম্পর্ক প্রেমে রূপ নেয়। এরপর প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন ভারতে। ঘরও বাঁধেন। কিন্তু সে সুখ বেশি দিন টেকেনি। প্রেমিক শচীন মীনাসহ (২২) এখন জেলবন্দী পাকিস্তানি গৃহবধূ সীমা গুলাম হায়দার (২৭)।  

কয়েক বছর আগে পরিচয় হয় সীমা ও শচীনের। এরপর অনেক দিন প্রেম করেছেন। সম্প্রতি সীমা সিদ্ধান্ত নেন, এখন থেকে তিনি প্রেমিকের সঙ্গে থাকবেন। গত মে মাসে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁর চার সন্তানকেও। দিল্লি সীমানা লাগোয়া উত্তর প্রদেশের শহর নয়ডায় একটি বাড়িতে ওঠেন। গত মঙ্গলবার পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারের পর সীমা ও শচীনকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালত দুই সপ্তাহের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ বলছে, মামলাটি নিয়ে তারা বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। সীমা ও শচীন সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা বিয়ে করে একসঙ্গে থাকতে চান।

দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভার্চ্যুয়াল জগৎ মানুষের বাস্তব জীবনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে কতটা ভূমিকা রাখছে, ভারত ও পাকিস্তানের দুই তরুণ-তরুণীর প্রেমকাহিনি সে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

সম্পর্কের শুরু
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দা গুলাম হায়দারের সঙ্গে বিয়ে হয় সীমার। এই দম্পতির রয়েছে চার সন্তান। এর মধ্যে একটি ছেলে ও তিনজন কন্যাসন্তান।

বিয়ের পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালে কাজের উদ্দেশ্যে অভিবাসী কর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান গুলাম হায়দার। বাড়িতে একা হয়ে পড়েন সীমা। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পাবজি খেলা শুরু করেন।

সীমা বলেন, ‘আমি সাধারণত দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পাবজি খেলতাম। খেলতে খেলতেই শচীনের সঙ্গে পরিচয় হয়। একে অপরের মুঠোফোন নম্বর নিই। এরপর নিয়মিত কথা হতে থাকে।’

ধীরে সে সম্পর্ক প্রেমের পরিণতি পায়। দেখতে দেখতে তিন বছর পেরিয়ে যায়। এরপর সীমা সিদ্ধান্ত নেন, শচীনকে বিয়ে করবেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে ভারত যান।

পুলিশকে সীমা বলেছেন, স্বামী গুলাম হায়দার তাঁকে মারধর করতেন। স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তবে পারিবারিক সহিংসতা ও বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি বলে দাবি করেন গুলাম হায়দার। তাঁর অভিযোগ, ঘরবাড়ি ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে ভারতে গেছেন সীমা।

প্রথম দেখা
পুলিশ বলছে, শচীন ও সীমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় নেপালে, গত মার্চে। নেপালে একটি আবাসিক হোটেলে কয়েক দিন থাকেন তাঁরা। এরপর সীমা পাকিস্তানে ও শচীন ভারতে ফিরে যান।

গত মে মাসে পর্যটন ভিসায় আবার নেপাল যান সীমা। এবার সঙ্গে ছিল তাঁর চার সন্তানও। নয়ডার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সাদ মিয়া জানান, সেখান থেকে বাসে করে আসেন দিল্লি।

পাকিস্তানে বাড়ি বিক্রি করে পালিয়ে এসেছেন—স্বামী গুলাম হায়দারের করা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সীমা। পুলিশকে তিনি বলেন, বাড়ি নয় তাঁর বাবা-মায়ের নামে থাকা একটি জমি বিক্রি করেছেন। নেপালে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করতেই জমি বিক্রি করেন। ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে নেপাল হয়ে ভারতে ঢোকার বিষয়টি জানতে পারেন সীমা।

শচীন মীনা বৃহত্তর নয়ডার রবুপুড়া নামে একটি ছোট শহরের বাসিন্দা। একটি মুদিদোকানে কাজ করেন তিনি। রবুপুড়াতেই একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে সীমা ও তাঁর চার সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তিনি।

শচীন ও সীমা যে বাড়িতে থাকতেন, সেটির মালিক গিরিশ কুমার বলেন, শচীন ও সীমাকে নিয়ে কোনো সন্দেহ হয়নি তাঁর। কারণ, বাড়িতে ওঠার সময় শচীন প্রয়োজনীয় সরকারি সব নথি তাঁকে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর বাবা-মা নিয়মিত তাঁদের ওখানে আসতেন। তাই তিনি সন্দেহ করেননি।  

যেভাবে ধরা পড়েন তাঁরা
গত সপ্তাহের ঘটনা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে সীমার বৈধভাবে বসবাসের কোনো সুযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর কাছে যান এই যুগল। এতেই বাধে বিপত্তি। ওই আইনজীবী তাঁদের বিষয়টি পুলিশকে জানান।

ওই আইনজীবী বলেন, ‘যখন আমি দেখলাম সীমা ও তাঁর সন্তানের পাসপোর্ট পাকিস্তানের, তখন আমি চমকে যাই। যখন জানলাম তাঁরা পাকিস্তানি নাগরিক, তখন আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাই।’

ভিসা ছাড়া সীমাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে শচীনের বাবাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অবশ্য শচীন ও সীমা তাঁদের বিয়ের ব্যাপারে সহায়তা করতে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।

এদিকে সীমার স্বামী গুলাম হায়দার দাবি করেছেন, পাবজি খেলতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী বিপথগামী হয়েছেন। মোহে পড়ে এ কাজ করেছেন সীমা। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের পাকিস্তানে ফেরত নিতে চান।