উত্তর প্রদেশে মসজিদে সমীক্ষাকে ঘিরে সংঘাতে নিহত ৪, বন্ধ ইন্টারনেট-স্কুল
ভারতের উত্তর প্রদেশে আদালতের নির্দেশে মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদে গতকাল রোববার সমীক্ষা চালাতে গিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। স্থানীয় লোকজন তাঁদের বাধা দেন। এর জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
উত্তর প্রদেশের সাম্ভাল এলাকায় ওই সংঘাতে চারজন নিহত হয়েছেন। ওই এলাকার ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল।
যে মসজিদকে ঘিরে এত সংঘাত, সেটির নাম শাহি জামা মসজিদ। মুঘল সম্রাট বাবর এ মসজিদ নির্মাণ করেন। এখন হিন্দুত্ববাদীরা দাবি তুলেছেন, একটি হিন্দু মন্দির ভেঙে সেখানে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। এ নিয়ে আইনি লড়াইও চলছে।
একটি পিটিশনের ভিত্তিতে সম্প্রতি আদালত শাহি জামা মসজিদে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল কর্মকর্তারা সমীক্ষা করতে গেলে স্থানীয় মানুষের বাধার মুখে পড়েন। সে সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুলিশ দুই নারীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, যাঁরা সংঘাতে ছিলেন বলে প্রমাণিত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাম্ভাল তহসিলে ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব স্কুলে ২৫ নভেম্বর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাইরের কেউ, সামাজিক সংগঠন বা জনপ্রতিনিধিদের সাম্ভালে প্রবেশ না করতে বলা হয়েছে।
যে কারণে মসজিদ সমীক্ষা ঘিরে সাম্ভালে সংঘাত
সাম্ভালে উত্তেজনা চলছে গত মঙ্গলবার থেকে। স্থানীয় একটি আদালতের নির্দেশে সেদিন সরকারি কর্মকর্তারা জামা মসজিদে সমীক্ষা চালান। মসজিদটি যে জায়গায় অবস্থিত, সেখানে আগে হরিহর মন্দির ছিল—এমন দাবি করে আদালতে একটি পিটিশন করেছেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। ওই পিটিশনের ভিত্তিতে আদালত সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সমীক্ষার কাজ শেষ না হওয়ায় রোববার সকালে আবার সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়।
হিন্দুদের পক্ষের একজন আইনজীবী দাবি করেছেন, ১৫২৯ সালে সম্রাট বাবর মন্দির ভেঙে সেখানে জামা মসজিদ নির্মাণ করেছেন।
মুসলমানদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘এটি একটি উসকানি, যা ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতার লঙ্ঘন। ভারতে ১৯৯১ সালে হওয়া একটি আইনে ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতার সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
সংঘাত হলেও কর্মকর্তারা সমীক্ষা চালিয়েছেন। ২৯ নভেম্বর সমীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পিটিশনকারীদের একজন বিষ্ণু শংকর জৈন।