তফসিলি সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটাব্যবস্থা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে গতকাল বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ‘রিজার্ভেশন বাঁচাও সংঘর্ষ কমিটি’র ডাকে গতকাল বিভিন্ন রাজ্যে পালিত হয়েছে ‘ভারত বন্ধ্’ কর্মসূচি।
বিহারের রাজধানী পাটনায় গতকাল বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। ভারত বন্ধ্ কর্মসূচি সফল করতে গতকাল রাজস্থানের বিকানের জেলায় তফসিলি সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
এদিকে গতকাল ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাজধানীর রাঁচিতেও ভারত বন্ধ্ কর্মসূচির প্রভাব পড়ে। বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেওয়ায় শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক বিক্ষোভকারীকে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
ভারত বন্ধ্ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তর প্রদেশের নয়দাতেও গতকাল পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। নয়দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সড়কে সড়কে টহল বাড়ানো হয়েছে।
কোটা সংরক্ষণ নিয়ে তফসিলি সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রসঙ্গে ভারতের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিং চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আইনমন্ত্রী লোকসভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভাও এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। ফলে এখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো আর কিছু নেই।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১ আগস্ট দেওয়া এক রায়ে বলেছেন, তফসিলি সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যাঁরা আর্থিকভাবে সচ্ছল, তাঁদের কোটা সংরক্ষণ বাতিল করা হোক। বরং যাঁরা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া বা অসচ্ছল, তাঁদের চিহ্নিত করে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হোক। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির একটি বেঞ্চের ছয় বিচারপতি এর পক্ষে রায় দেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, কোটাব্যবস্থা সবার জন্য রাখতে হবে। কোটা নিয়ে নতুন আইন করতে হবে। এ ছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে থাকা সংরক্ষিত শূন্য পদগুলোতে অবিলম্বে নিয়োগ দেওয়ার দাবিও উঠেছে বিক্ষোভ থেকে। এ নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ না নিলে বন্ধ্ ছাড়াও ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তফসিলি সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগঠনগুলো।
কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভাও এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। ফলে এখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো আর কিছু নেই।
কোটাব্যবস্থা নিয়ে ভারতের তফসিলি সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা এমন সময় মাঠে নেমেছেন, যখন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় একজন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ উত্তাল ভারত।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় গতকালও ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, উত্তর প্রদেশের বারানসিসহ বিভিন্ন শহরে চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীদের বিক্ষোভ হয়েছে।