‘মণিপুর পুলিশকে যুদ্ধাস্ত্র দিচ্ছে ভারত, এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক’
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল পদমর্যাদার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার দাবি করেছেন, ভারত মণিপুরে কনভেনশনাল ওয়ার বা প্রথাগত যুদ্ধের অস্ত্র সে রাজ্যের স্বল্প প্রশিক্ষিত পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ভারতের জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও এ তথ্য প্রচারিত হয়েছে দাবি করে কর্নেল (অব.) অলোক আস্থানা বলেন, এই মারণাস্ত্র ইতিমধ্যে মণিপুর পুলিশের হাতে পৌঁছেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ষষ্ঠ পদমর্যাদার কর্মকর্তা হলেন কর্নেল। পুলিশকে যুদ্ধাস্ত্র দেওয়া বিষয়ে গত সোমবার অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্নেলের লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ করে ভারতের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘দ্য ওয়ার’ জানায়, এটি আগে ‘দ্য ইন্ডিয়া কেবল’ নামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
কয়েক সেকেন্ডে ২৩৫টি পর্যন্ত গুলি চালাতে সক্ষম একটি মেশিনগান, যার পাল্লা দুই কিলোমিটার; সেটি নিঃসন্দেহে একটি অতি শক্তিশালী অস্ত্র। সে কারণে শুধু এমএমজি নয়, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যদের এলএমজিও দেওয়া হয় না। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় তাঁরা একেকবার একটিমাত্র গুলি করতে পারেন।
প্রথাগত যুদ্ধাস্ত্রের পরিচয়
মণিপুর পুলিশকে যে আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হয়েছে, সেটি ৭ দশমিক ৬২ মিলিমিটারের মধ্যম পাল্লার মেশিনগান (এমএমজি)। কর্নেল (অব.) আস্থানা লিখছেন, পাঠকেরা এমএমজিকে আরেকটি সাধারণ অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করার আগে দেখা দরকার, এটি আসলে কী।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘এমএমজি এমন একটি অস্ত্র, যা দিয়ে সেনাবাহিনী প্রায় ১৫০ মিটার x ৭৫ মিটারের একটি দুর্গম বলয় তৈরি করতে পারে। এটিকে একটি ‘এরিয়া ওয়েপন’ বা একটি অঞ্চলের ওপরে হামলা চালানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। এর অগ্নিবলয়ের মধ্যে কেউ পড়লে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত।’ অর্থাৎ এটি কোনো সাধারণ বন্দুক নয়। এটি থেকে পরপর গুলি বেরোয় বা একটি গুলির পর আরেকটি গুলি বেরোয়।
তবে এমন নয় যে এমএমজি থেকে শুধুই আগুন বেরোয়, গুলি নয়। অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্নেল লিখেছেন, ‘একটি এলএমজি (লাইট মেশিনগান) বা রাইফেল থেকেও গুলি বেরোয়। যেহেতু এই তিন অস্ত্র (এমএমজি, এলএমজি, রাইফেল) থেকেই গুলি বেরোয়, ফলে এ তিনই প্রাণঘাতী অস্ত্র। কিন্তু এমএমজি থেকে বাড়তি যা বেরোয়, সেটি হলো বড় একটা অঞ্চলকে গ্রাস করার মতো আগুনের হলকা।’
সেনাবাহিনী এমএমজি এমন জায়গায় ব্যবহার করে, যেখানে ‘শত্রুরা জড়ো হয়ে আছেন’ এবং যাঁদের নিশ্চিহ্ন করা যাবে। আস্থানা লিখেছেন, ‘এটি প্রথাগত যুদ্ধের একটি অস্ত্র।’ তিনি জানান, ‘এ যুদ্ধাস্ত্র এতই বিপজ্জনক যে অভ্যন্তরীণ সংঘাত সামলাতে ভারতের সেনাবাহিনীকেও এমএমজি দেওয়া হয় না।’
‘কয়েক সেকেন্ডে ২৩৫টি পর্যন্ত গুলি চালাতে সক্ষম একটি মেশিনগান, যার পাল্লা দুই কিলোমিটার, সেটি নিঃসন্দেহে একটি অতি শক্তিশালী অস্ত্র। সে কারণে শুধু এমএমজি নয়, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যদের এলএমজিও দেওয়া হয় না। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় তাঁরা একেকবার একটিমাত্র গুলি করতে পারেন। প্রতিটি গুলির রেকর্ড কঠোরভাবে রাখা হয়। একই সঙ্গে গুলি চালানোর আদেশ কে দিয়েছিলেন, কার বিরুদ্ধে দিয়েছিলেন এবং এর ফলাফল কী হয়েছিল, সেই রেকর্ড রাখাও বাধ্যতামূলক’, লিখেছেন আস্থানা।
ভবিষ্যতের বিপদ
কর্নেল (অব.) আস্থানা ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে, তাঁর অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ বিপদ সম্পর্কে সরকারকে সজাগ করে দিয়েছেন।
‘আমি ঠিক এই এলাকায় (মণিপুরে) একটি ইউনিট পরিচালনা করেছি, যেখানে এখন সংঘাত হচ্ছে। সেই সময়ে আমি দেখেছি, মণিপুরের কমান্ডোরা স্থানীয় সব উপজাতির কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য। এমন একটি বাহিনীকে এমএমজি দেওয়া একটি সাংঘাতিক বিপজ্জনক কাজ’, মন্তব্য আস্থানার।
নিবন্ধের শেষের দুই অনুচ্ছেদে বিপদের আরও নানা দিক তুলে ধরে আস্থানা বলেছেন, সম্ভবত মনিপুর সরকারের ৪০০০ অস্ত্র লুট হয়ে যাওয়ার কারণেই এখন এমএমজি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতে যদি এই এমএমজি লুট হয়, তবে তা কি ভারত সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে?
পরিশেষে, যেন কিছুটা হতাশ হয়েই সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্নেল লিখেছেন, ‘যেহেতু অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি ইতিমধ্যে এ মারাত্মক অস্ত্র মণিপুর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে, ফলে এটা এখন স্পষ্ট যে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি তাদের নির্দেশ দিয়েছে। অতএব পরিস্থিতি অনিশ্চিত। পুলিশ সদস্যদের মাত্র ২১ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে এমএমজি গুলি চালানো শুরু করার আগে আশা করব, শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’