বুথফেরত জরিপের ফল প্রকাশ আজ, আস্থা রাখছে না কংগ্রেস
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগে ময়দান ছাড়তে রাজি নয় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। বিজেপির যাবতীয় মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রতিহত করতে বিরোধী নেতারা তাই আগে থেকেই প্রস্তুত হয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে বিরোধী নেতারা আরও একবার সেই প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে চলেছেন।
আজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে সপ্তম তথা শেষ দফার ভোট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই বারানসিতে শেষ দফার ভোটের প্রার্থী। মোট ৫৭ আসনের ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যাবে টেলিভিশন চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ‘এক্সিট পোল’ বা বুথফেরত জরিপের ফল ঘোষণা।
বিরোধী মহল নিশ্চিত, বুথফেরত জরিপের ফল দেখিয়ে অনুগত সব গণমাধ্যমে বিজেপি প্রচার শুরু করবে, তৃতীয়বার সরকার গড়বেন নরেন্দ্র মোদিই। ৪ জুন ভোট গণনা প্রভাবিত করতে সেটা হবে শাসক দলের আরও এক মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। লক্ষ্য, গণনাকেন্দ্রে বিরোধী দলের এজেন্টদের মনোবল আগে থেকে ভেঙে দেওয়া, যাতে প্রান্তিক আসনগুলোয় বিজেপি বা এনডিএ প্রার্থীদের জয় সুনিশ্চিত করে ফেলা যায়।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জেতা ৩০৩ আসনের মধ্যে ৪০টিতে জয় এসেছিল ৫০ হাজারের কম ভোটে। ওই আসনগুলোর মধ্যে ১১টিতে হেরেছিল কংগ্রেস।
গণনা শেষ হওয়ার আগে তাই লড়াই থেকে এক কদমও পিছিয়ে আসতে নারাজ ‘ইন্ডিয়া’ জোট। জোট নেতৃত্ব তাই আগে থেকে দলীয় কর্মীদের সতর্ক ও সজাগ করে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় রাহুল গান্ধী দলীয় নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইভিএমের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। শেষ দফার ভোট ও গণনার দিন কর্মীদের প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো রকম ঢিলেমি দেওয়া যাবে না।
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবও একই কথা জানিয়ে বলেছেন, বুথফেরত সমীক্ষা শুরু হওয়ামাত্র বিজেপি তাদের অনুগত মাধ্যমগুলোয় প্রচার চালাবে, তিন শতাধিক আসন পেয়ে তারাই আবার সরকার গড়তে চলেছে। গণনার দিন শুরু থেকেই বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দিতে এটা তারা করবে, যাতে গণনাকেন্দ্রে তাদের কারচুপি প্রতিরোধের শক্তি না থাকে। বিরোধীরা যাতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। সেই অবকাশে বিজেপি তাদের সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির সাহায্যে গণনায় কারচুপি করবে।
উদাহরণ হিসেবে চণ্ডীগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচন কেলেঙ্কারির উল্লেখ করেছেন অখিলেশ। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে লেখা এক খোলাচিঠিতে তিনি বলেছেন, সিসিটিভির সামনে যারা ওই ধরনের দৌরাত্ম্য দেখাতে পারে, তাদের কাছে অসম্ভব কিছু নেই। জেতার জন্য বিজেপির পক্ষে যেকোনো ধরনের কারচুপি করা সম্ভব।
কংগ্রেস সভাপতি খাড়গের ডাকা বৈঠকের মূল উদ্দেশ্যও এই প্রস্তুতির বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক করে প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেওয়া। গণনার দিন বিরোধী সব প্রার্থীর এজেন্টদের করণীয় বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেওয়া। সেই সঙ্গে সব বিরোধী নেতার কাছ থেকে ভোটের রাজ্যওয়ারি হিসাব বুঝে নেওয়া।
সবদিক খতিয়ে দেখে কংগ্রেস ঠিক করেছে, আজ বুথফেরত সমীক্ষার ফল নিয়ে আলোচনায় বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বিতর্কে তারা অংশ নেবে না। দলের মুখপাত্র পবন খেরা গতকাল শুক্রবার রাতেই জানিয়ে দেন, ভোট নিয়ে আলোচনায় কংগ্রেস অংশ নেবে গণনার দিন। তার আগে নয়। কোনো চ্যানেলে দলের কোনো মুখপাত্র শনিবার সন্ধ্যায় হাজির হবেন না।
বিজেপি সঙ্গে সঙ্গেই বলতে শুরু করেছে, এর মধ্য দিয়ে কংগ্রেস আগেভাগেই হার স্বীকার করে নিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কংগ্রেস দলটা চিরকালই নেতিবাচক থেকে গেল। হার নিশ্চিত জেনে আগেভাগেই তারা পালাতে চাইছে। তিনি বলেন, ওদের উচিত না পালিয়ে বাস্তবটা স্বীকার করে নেওয়া ও আত্মানুসন্ধান করা।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর বিরোধীরা যে মোটেই আস্থাশীল নয়, এসব সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট। বিরোধীদের আশঙ্কা, কমিশন সব সময় চেষ্টা করে যাবে শাসক দলকে সুবিধা করে দেওয়ার। তামিলনাড়ুর ডিএমকের পক্ষ থেকে ইসিকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ৪ জুন পোস্টাল ব্যালট যেন শুরুতেই গোনা হয়। সেই হিসাবও জানিয়ে দিতে হবে। তারপর যেন শুরু করা হয় ইভিএমের গণনা। বিরোধী ধারণা, পোস্টার ব্যালট পরে গোনা হলে তাতে কারচুপির আশঙ্কা বেশি থাকে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের এক হিসাবও কংগ্রেস দিয়েছে। বলেছে, এবারের ভোট চলাকালে কমিশনের কাছে দল মোট ১১৭টি অভিযোগ জমা দিয়েছিল।
সেগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ছিল ১৪টি, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ৮টি এবং অমিত শাহর বিরুদ্ধে ৩টি নির্দিষ্ট অভিযোগ। কমিশন একটিও আমলে নেয়নি।