জম্মু–কাশ্মীর ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছেন ইসি কর্মকর্তারা

ভারতের জম্মু–কাশ্মীরের সড়কে সেনাবাহিনীর সতর্ক পাহারা, ২৬ জুনছবি: এএনআই

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট করানো সম্ভব কি না, খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্য ৮ আগস্ট কাশ্মীরে যাচ্ছেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে সফরসঙ্গী হচ্ছেন দুই নির্বাচন কমিশনার এস এস সান্ধু ও জ্ঞানেশ কুমার।

৮ ও ৯ আগস্ট শ্রীনগরে কাটিয়ে ১০ আগস্ট রাজীব কুমার সদল যাবেন জম্মু। রাজীব কুমার শেষবার জম্মু–কাশ্মীরে গিয়েছিলেন গত মার্চে। তখন দুই কমিশনারের পদ খালি ছিল। লোকসভার ভোটের ঠিক আগে ওই দুই পদে নিয়োগ করা হয়েছিল সান্ধু ও জ্ঞানেশ কুমারকে।

জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার ভোট শেষবার হয়েছিল ২০১৪ সালে, তখন তা রাজ্য ছিল। সেই নির্বাচনে মোট ৮৭ আসনের মধ্যে পিডিপি পেয়েছিল ২৮টি, বিজেপি ২৫টি। ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস পেয়েছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১২টি আসন।

সেই বছরের ডিসেম্বরে ভোটের ফল ঘোষিত হলেও টানা তিন মাস সরকার গঠন নিয়ে গড়িমসি চলেছিল। শেষ পর্যন্ত মার্চে পিডিপি ও বিজেপি জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গড়ে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মেহবুবা মুফতি, উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপির নির্মল কুমার সিং। ২০১৮ সালে সরকারের পতন ঘটে। সেই থেকে চলছে রাষ্ট্রপতির শাসন। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু–কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হয়। রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গঠিত হয়েছে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল—জম্মু–কাশ্মীর ও লাদাখ।

জম্মু–কাশ্মীরের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনো হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী হননি। বিজেপির লক্ষ্য ক্ষমতা দখল করে হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী উপহার দেওয়া। সেই লক্ষ্য পূরণে বিধানসভা ও লোকসভার কেন্দ্রগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আসনসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

মুসলমানপ্রধান কাশ্মীরের সঙ্গে হিন্দুপ্রধান জম্মু এলাকার আসনের তারতম্য কমিয়ে আনা হয়েছে। ২০১৪ সালে রাজ্যের মোট আসন ছিল ৮৭টি (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত ২৪ আসন ছাড়া), এখন ৯০। এর মধ্যে কাশ্মীরে ৪৭, জম্মুতে ৪৩।

এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জম্মুর দুটি আসনে জেতে। কিন্তু উপত্যকায় তারা কোনো প্রার্থী দেয়নি। তাদের মদদপুষ্ট আপনি পার্টি (আলতাফ বুখারি) ও আজাদ পার্টির (গুলাম নবি আজাদ) কোনো প্রার্থীও জেতেনি। এবার বিজেপি চাইছে জামায়াত–ই–ইসলামির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিয়ে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আপনি পার্টি ও আজাদ পার্টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক।

বিজেপির লক্ষ্য কোনোভাবেই যাতে এনসি, কংগ্রেস ও পিডিপি জোটবদ্ধভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। রাজ্য দ্বিখণ্ডীকরণের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, জম্মু–কাশ্মীরকে তিনি তিন পরিবারের শাসনের হাত থেকে মুক্ত করবেন। সেই তিন পরিবার হলো আবদুল্লাহ, মুফতি ও গান্ধী।

শ্রীনগরে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা স্থানীয় রাজনৈতিক দল, পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার কারণে ভোট করানো যাবে কি না, সার্বিক প্রস্তুতি কতটা ভোটের অনুকূল, তা বিবেচনা করবেন। খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত কি না, দেখবেন। ১০ আগস্ট জম্মুতেও একইভাবে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলন করা হবে।