কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের যে আন্দোলন চলছিল, তার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। তবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চিকিৎসকেরা আন্দোলন থেকে সরে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। তবে মমতার সরকার আশা করছে, চিকিৎসকেরা শিগগিরই আন্দোলন থেকে সরে আসা ঘোষণা দেবেন।
কিন্তু এর মধ্যেই নতুন সমস্যায় পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। উত্তর কলকাতার টালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) গ্রেপ্তারের ফলে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের মধ্যে কার্যত বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। তাঁকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের মৃত্যুর ১৪ ঘণ্টা পর তিনি প্রাথমিক তদন্তের অভিযোগ করেন। এ কারণেই গ্রেপ্তার করা হয় অভিজিৎকে।
অভিজিৎ মণ্ডলকে সরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে কলকাতা পুলিশ সদস্যদের একাংশ। তাদের বক্তব্য, তারা যে কাজ করে, তা সব সময় করা হয় নির্দিষ্ট নির্দেশের ভিত্তিতে। সেই নির্দেশ আসে ওপরতলার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। মূলত ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এ আদেশ দেন। এ নির্দেশ অনেক সময় সরকারিভাবে দেওয়া হয় না বা দেওয়ার সময় থাকে না। ফলে অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘হোয়াটসঅ্যাপ’–এর মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ধরনের নির্দেশ তাঁরা আর নেবেন না বলে কলকাতার সাধারণ পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একাধিক ক্ষোভ।
কলকাতা পুলিশের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আইপিএসরা সবকিছু আমাদের ঘাড়ে ফেলে মজা নেয়। আমাদের একজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হলো অথচ সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে যে শুনানি ছিল, সেখানে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল একটি শব্দও বললেন না। অভিজিৎ মণ্ডলের বিষয়টি প্রাধান্য পেল না এবং যথাযথভাবে সর্বোচ্চ আদালত কে এটা বলা হলো না যে তাঁর কোনো গাফিলতি নেই। তিনি যা করেছেন, ওপরের কর্মকর্তাদের নির্দেশেই করেছেন।’
পুলিশের ১৪ দফা দাবিতে একাধিক বিষয়ে যোগ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। এর মধ্যে ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ নির্দেশ না নেওয়ার পাশাপাশি অভিজিৎ মণ্ডলকে আইনি সাহায্য, তাঁর পরিবারকে সাহায্য ও নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ সদস্য কর্মী ও কর্মকর্তাদের বক্তব্য মূল স্রোতের প্রচারমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্দিষ্টভাবে তুলে ধরার কথাও বলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য যে তাঁরা যাবতীয় জঞ্জাল ও নোংরা ঘাঁটবেন আর ওপরতলার কর্মকর্তারা কৃতিত্ব নিয়ে যাবেন, সেটা আর হবে না।
তবে অতীতেও এ ধরনের দাবি পুলিশের অধস্তন কর্মীদের মধ্য থেকে উঠেছে। আবার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেছে। ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সব কিছুই মোটামুটি ‘ম্যানেজ করে’ চলছিল। এর মধ্যে এ ঘটনা পরিস্থিতিকে উত্তাল করে দিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দেখা করে কথা বলেছেন অভিজিৎ মণ্ডলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এবং সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন যে তিনি কর্তব্যে কোনো গাফিলতি করেননি। মণ্ডলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সিপিআই এনেছে, তার কোনো ভিত্তি নেই বলেও জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নতুন কমিশনার কীভাবে পরিস্থিতির সামাল দেন, সেটাই দেখার।