মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী আবার সংঘাতের আবহ তৈরি করছেন, অভিযোগ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগঠনের

ভারতের মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং দুই দিন আগে বলেছিলেন, রাজ্যের তফসিলি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ভবিষ্যতে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি হতে চলেছে। এ বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মণিপুরের প্রধান ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগঠন বিবৃতি দিয়ে বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং ‘একটি নতুন দিক (ফ্রন্ট) খুলছেন’, এতে ‘সংঘাত বাড়তে পারে’। কারণ, সরকার তফসিলভুক্ত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন।

উত্তর–পূর্ব ভারতের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের সংগঠন ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ) দক্ষিণ মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরভিত্তিক একটি কুকি-জোমি সংগঠন। তারা মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেছে, চলমান সংঘাতে ‘নতুন ফ্রন্ট খোলার’ চেষ্টা শুরু হয়েছে।

গত বুধবার জারি করা এক বিবৃতিতে আইটিএলএফ বলেছে, ‘এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে মণিপুরের রাজ্য সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বর্তমান জাতিগত সংঘাতে মেইতেইদের প্রকাশ্যে ও গোপনে সমর্থন করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক বীরেন সিংয়ের প্রশাসন এখন ভারতের এসটি তালিকা থেকে কুকি-জো সম্প্রদায়কে অপসারণের জন্য চাপ দিয়ে একটি নতুন ফ্রন্ট খুলেছে।’

মুখ্যমন্ত্রীকে সাবধান করে দিয়ে আইটিএলএফ বলেছে, ‘কুকি-জো সম্প্রদায়কে টার্গেট করার জন্য বীরেন সিং দ্বারা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার যেকোনো চেষ্টা কেবল সংঘর্ষকে বাড়িয়ে তুলবে। এটা শেষ পর্যন্ত তাঁর এবং রাজ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।’

আইটিএলএফের এ মন্তব্যের কারণ দক্ষিণ-পূর্ব মণিপুরে ইতিমধ্যেই রাজ্যের পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের লড়াই শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ লড়াইকে মিয়ানমার থেকে আসা জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, তাঁদের ওপর হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, কারণ তাঁরা মণিপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সমাজের মানুষ।

অপর একটি সংগঠন কুকি ইনপি মণিপুরে শুধু কুকি জাতিসত্তার শীর্ষ সংগঠন। তারা বলেছে, ‘সম্প্রদায়ের এসটি (শিডিউল ট্রাইব) মর্যাদা পরিবর্তন করার’ চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।

কুকি ইনপি বলেছে, ‘কুকি ইনপি সদর পার্বত্য শাখা কুকি সম্প্রদায়ের তফসিলি উপজাতির মর্যাদা থেকে মুছে ফেলার যেকোনো চেষ্টার তীব্র নিন্দা করে। কারণ, এটি ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত নীতিগুলোকে স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে৷ এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল উপজাতীয় সম্প্রদায়ের জন্য প্রদত্ত সাংবিধানিক সুরক্ষাকে ক্ষুণ্ন করে না, তৎসহ অন্যায় ও বৈষম্যকে স্থায়ী করে।’

গত বছর মণিপুর হাইকোর্টের এক নির্দেশের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে তফসিলি সম্প্রদায় হিসেবে মর্যাদা দিতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। এর জেরে সংঘাত শুরু হয় এবং মারা যান অন্তত ১৮০ জন। প্রক্রিয়াটির নিন্দা করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের এই চেষ্টাকে বানচাল করে দেওয়া যায়।

এ বছর উল্টোভাবে একই কাজ করার চেষ্টা করছে মণিপুরের বিজেপি সরকার। তারা মেইতেই সমাজকে তালিকার অন্তর্ভুক্ত না করে কুকি-জো-চিন প্রভৃতি সম্প্রদায়কে তফসিলি ‘আদিবাসীদের’ তালিকা থেকে সরাতে চাইছে। তাদের বিবৃতিতে বিষয়টির উল্লেখ করে আইটিএলএফ লিখেছে, ‘প্রথমে তারা আমাদের মতো আদিবাসী হওয়ার চেষ্টা করেছিল, তারপর তারা আমাদের হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার জন্য সহিংস পথ ব্যবহার করেছিল। তারপর তারা আমাদের নাম ও ইতিহাসকে বদনাম করার জন্য মিথ্যা প্রচারের ধাক্কাধাক্কি চালায় এবং আমাদের সম্প্রদায়ের পক্ষে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়ে পুলিশ আইনের অপব্যবহার করে। এখন তারা আদিবাসী হিসেবে আমাদের মর্যাদা মুছে দিতে চাইছে।’