ভারতের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন শেষে বুথফেরত সমীক্ষায় রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে যে কেউ জিততে পারে। কোনো কোনো সমীক্ষক সংস্থার মতে, পাঁচ বছর পরপর শাসক বদলের রীতি এবারও রাজস্থানে জারি থাকছে। কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি। আবার কেউ কেউ মনে করছে, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবার ৩০ বছরের রীতি বদলাতে চলেছেন।
সমীক্ষকেরা একই রকম দ্বিধাবিভক্ত মধ্যপ্রদেশ নিয়েও। কেউ কেউ বিজেপি, কেউবা কংগ্রেসকে সামান্য এগিয়ে রেখেছে। তুলনায় মোটামুটিভাবে অধিকাংশ একমত ছত্তিশগড় নিয়ে। সেখানে কংগ্রেস দ্বিতীয়বার সরকার গড়বে বলে সমীক্ষকেরা একমত। তবে আগেরবারের তুলনায় কংগ্রেসের আসন কমবে ও বিজেপির বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। একই চিত্র বেরিয়ে আসছে তেলেঙ্গানাতেও। প্রায় সবাই দক্ষিণের এই রাজ্যে কংগ্রেসের উত্থান দেখতে পাচ্ছে। ক্ষমতাসীন ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে বলে সমীক্ষকদের অভিমত। তেলেঙ্গানায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন বিআরএসের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও।
উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের ফলাফল বিধানসভা সরকার গঠনে সংকট তৈরি করবে, এমন আগাম আভাস দিয়েছেন অনেকে। সেখানে ক্ষমতাসীন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে জেডপিএম ও কংগ্রেস। কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে বিধানসভার সরকার গঠনে কংগ্রেস বড় ভূমিকা নিতে পারে।
৭ নভেম্বর থেকে শুরু করে ৩০ তারিখ পর্যন্ত এই পাঁচ রাজ্যে ভোট গ্রহণ হয়। বৃহস্পতিবার শেষ দফার ভোট হয় তেলেঙ্গানায়। ভোটের ফল প্রকাশ হবে ৩ ডিসেম্বর।
এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ ছিল বিজেপির দখলে, কংগ্রেসের দখলে রাজস্থান ও ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা বিআরএসের এবং এমএনএফ ছিল মিজোরামের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠ দল।
প্রতিটি রাজ্যে এবার কংগ্রেস ক্ষমতা দখলের জন্য লড়াই করেছে। মধ্যপ্রদেশ বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া প্রচার চালিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। একই রকম রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা সচেষ্ট। গত তিন মাসে তেলেঙ্গানার ভোটের ছবিও কংগ্রেস আমূল বদলে দিয়েছে। দক্ষিণের এই রাজ্যে তিন মাস আগেও বিআরএসের চ্যালেঞ্জার ছিল বিজেপি। কিন্তু কর্ণাটক জয় ও ভারত জোড়ো যাত্রা ছবিটি বদলে দেয়। ইন্ডিয়া টিভি–সিএনএক্স, জন কি বাত, নিউজ ২৪–টুডেস চাণক্য, রিপাবলিক টিভি–ম্যাট্রিজ, টিভি ৯–পোলস্টার্ট প্রত্যেকে ১১৯ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে। অধিকাংশের ধারণা বিজেপি এই রাজ্যে দ্বিতীয় অঙ্কে পৌঁছাতে পারবে না। হায়দরাবাদ অঞ্চলের প্রভাবশালী দল এআইএমআইএম মাত্র ৯টি আসনে লড়ছে। তারা ৫ থেকে ৭টি আসন পেতে পারে। কংগ্রেস তেলেঙ্গানায় জিতলে সেটা হবে বড় চমক।
তেমনই চমক এই দল রাজস্থানেও (২০০ আসন) দেখাতে পারে বলে কোনো কোনো সমীক্ষক দলের ধারণা, যেমন ইন্ডিয়া টুডে–অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া মনে করছে বিজেপিকে (৮০–১০০) পিছিয়ে দেবে কংগ্রেস (৮৬–১১০)। ইন্ডিয়া টিভি–সিএনএক্সের ধারণাও তা–ই। বিজেপি পাবে ৮০–৯০ আসন, কংগ্রেস ৯৪–১০৪। কিন্তু এবিপি নিউজ–সি ভোটার বিজেপিকে দিচ্ছে ৯৪–১১৪, দৈনিক ভাস্কর ৯৮–১০৫, জন কি বাত ১০০–১২২, পি–মার্ক ১০৫–১২৫ ও রিপাবলিক টিভি–ম্যাট্রিজ দিচ্ছে ১১৫–১৩০। মরুরাজ্যে বিজেপি প্রতিবার ক্ষমতায় এসেছে বিপুল ভোটে জেতে। তুলনায় কংগ্রেস ব্যবধান রাখতে পেরেছে মাত্র কয়েকটি আসনের। এবারের বুথফেরত সমীক্ষা অন্তত এটুকু বোঝাচ্ছে, কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থেকেছে। যার ফলে বিজেপি জিতলেও সেই জয় হবে কষ্টসাধ্য।
মধ্যপ্রদেশে (২৩০ আসন) গতবার কংগ্রেস জিতেছিল। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় কংগ্রেস ভেঙে সরকার গড়ে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হন শিবরাজ সিং চৌহান। এবার কংগ্রেসের বদলা নেওয়ার পালা। দৈনিক ভাস্কর, জন কি বাত, টাইমস নাউ–ইটিজি ও টিভি ভারতবর্ষ–পোলস্টার্ট মনে করছে, কংগ্রেস সেই বদলা নিতে পারবে। তারা কংগ্রেসকে ১০২ থেকে ১২৫টি আসন দিচ্ছে। পাশাপাশি ইন্ডিয়া টুডে–অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়া টিভি–সিএনএক্স বিজেপিকে বিপুল ভোটে (১৪০–১৬২) জয়ী দেখছে। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে সেটা হবে তাদের কৃতিত্ব।
বুথফেরত সমীক্ষা বহু সময়ে যেমন ভুল প্রমাণিত হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তেমন সমীক্ষার ফল মিলে গেছে প্রকৃত ফলের সঙ্গেও। কাজেই কোনো দলই এই সমীক্ষাকে উপেক্ষা করতে পারে না। এবার দেখা যাচ্ছে, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ বাদ দিয়ে বাকি তিন রাজ্যে মোটামুটিভাবে সবার অঙ্ক সমান। তেলেঙ্গানা ও ছত্তিশগড় কংগ্রেসের, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে যুযুধান দুই দলই প্রায় সমান সমান। মিজোরাম ত্রিশঙ্কু। বিজেপি রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে জিততে পারলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। কংগ্রেস চারটি রাজ্যে জয়ী হলে ভারতের রাজনীতি নতুন খাতে বইতে পারে। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনও অন্য গুরুত্ব পাবে।