সরকার গঠনের সমর্থনের বিনিময়ে বিজেপির কাছে কী দাবি তুলতে পারেন নাইডু
ভারতের ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের শরিক জেডি–ইউর নেতা নীতীশ কুমার ইতিমধ্যে বিজেপির কাছে বেশ কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরেছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে আসছে। আরেক শরিক টিডিপির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুই–বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? তিনিও নরেন্দ্র মোদির সরকার গঠনের আগে নিজেদের কিছু দাবি তুলে ধরতে পারেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।
নাইডু অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা চান। পাশাপাশি মন্ত্রিসভাতেও জায়গা চান। নিজের ছেলেকেও তিনি মন্ত্রিসভায় ঢোকাতে বলছেন। আবার তাঁর বহুদিনের পরিকল্পিত রাজ্যের রাজধানী অমরাবতীর জন্য বিশেষ তহবিল চান।
চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বে তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) লোকসভার নির্বাচনে অন্ধ্রপ্রদেশে দারুণ ফল করেছে। রাজ্যের ১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাঁর দল ১৬টিতে জয়ী হয়েছে। আবার রাজ্যের বিধান সভায় ১৭৫ আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে জয় পেয়েছে।
কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে গিয়ে এবার ৩২ আসনের ঘাটতি আছে বিজেপির। এ অবস্থায় জোটের শরিকদের বিশেষ করে টিডিপির সমর্থন তাদের জন্য খুবই দরকার। কারণ, এনডিএ জোটের শরিকদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জয়ী হয়েছে নাইডুর দল। ফলে বিজেপির সঙ্গে দর–কষাকষির বেশ ভালো সুযোগ পাচ্ছে তারা।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার এক দিন পর গতকাল বুধবার নাইডু ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি এখনো এনডিএ জোটের অংশ।
অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে দিল্লির উদ্দেশে উড়োজাহাজে চড়ার আগে নাইডু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এনডিএর সভায় যোগ দিতে নয়াদিল্লি যাচ্ছি। সেখানে আর কোনো নতুন তথ্য থাকলে আমি আপনাদের জানাব।’
গতকাল সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে এনডিএর বৈঠকে যোগ দেন নাইডু।
সূত্র বলছে, টিডিপির প্রধান অন্ধপ্রদেশের বিশেষ শ্রেণির মর্যাদা (এসসিএস) চাইতে পারেন। ২০১৮ সালে এই ইস্যুতে তিনি এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এসসিএস মর্যাদা পেলে অন্ধ্রপ্রদেশ অনুদানের আকারে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রচুর আর্থিক সহায়তা, শিল্পে প্রণোদনা, কর অব্যাহতি, জিএসটি ছাড়সহ নানা সুযোগ–সুবিধা পাবে। এই আর্থিক সহায়তার জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না।
অমরাবতীকে রাজ্যের রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আরও তহবিল চাইতে পারেন। ২০১৯ সালে জগন মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস (ওয়াইএসআরসিপি) ক্ষমতায় আসার পর এ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নাইডু ক্ষমতায় থাকাকালে নানা ভবন ও অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছিল। এসব ভবন এখন খালি পড়ে আছে, যা এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
নাইডু ৯ জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর আবার সেখানে উন্নয়নকাজ শুরু করতে চান। তাতিকোন্দার এমএলএ তেনালি শ্রাবণ কুমার বলেন, ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের মধ্যে তিনি অমরাবতী উন্নয়নের নথি প্রকাশ করবেন।
আরেকটি দাবি তুলতে পারেন নাইডু। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পোলাভারাম প্রকল্প শেষ করতে তহবিল চাইতে পারেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি এ প্রকল্প শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
টিডিপির সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এমনকি স্পিকার পদ চাইতে পারেন নাইডু। তিনি নিজের সন্তান ও টিডিপির সাধারণ সম্পাদক নারা লোকেশকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে চাইছেন। বিধান সভা নির্বাচনে এবারই প্রথম তিনি মানাগালাগিরি থেকে জয়ী হয়েছেন।
নাইডু রাজ্যের জগন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করে থাকেন। এবার তিনি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে জগনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে এনডিএ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে পারেন।