মার্কিন ধনকুবের সোরসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করছে কংগ্রেস: বিজেপি
সংসদে বিরোধীদের মোকাবিলায় নতুন ভূমিকায় নামল সরকারপক্ষ। আজ সোমবার রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতবি হয়ে গেল শাসক জোটের সদস্যদের জন্য। তাঁদের দাবি, ভারতের সার্বিক অগ্রগতি রুখতে মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরসের অর্থায়নে গঠিত সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেস ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ নিয়ে আলোচনার অনুমতি দিতে হবে।
আজ লোকসভাও বারবার মুলতবি হয় বিরোধীদের দাবিতে। বিরোধীরা নতুন দাবি তুলেছে, চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ২০২০ সালে লাদাখ সংঘর্ষের পর চার বছর ধরে চীন নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়নি। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এই আলোচনার দাবি। সরকার যদিও নারাজ।
বস্তুত, সরকার কোনো বিষয়েই আলোচনার পক্ষপাতী নয়। আদানির ঘুষ–কাণ্ড, মোদি–আদানি সম্পর্ক, সম্ভল দাঙ্গা, মণিপুর পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি—কোনো বিষয় নিয়েই সরকারপক্ষ সংসদে আলোচনায় রাজি নয়। বিরোধীদের পাল্টা চাপে রাখতে এবার তারা তুলে ধরেছে বিদেশি চক্রান্তের তত্ত্বকে।
সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু আজ রাজ্যসভায় এ প্রসঙ্গে বলেন, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরসের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুতর। সোরসের সংস্থা পরিকল্পিতভাবে ভারতবিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীর নিয়ে তারা অপপ্রচার করছে। ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি রুখতে এখন তারা অন্যভাবে সক্রিয়। একই অভিযোগ রাজ্যসভার নেতা জে পি নাড্ডারও। তিনি বলেন, এ নিয়ে অবশ্যই চর্চা হওয়া উচিত। এর সঙ্গে দেশের সুরক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বিজেপির অভিযোগ, শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা হিনডেনবার্গ বা সে দেশের বিচার বিভাগ যেসব অভিযোগ এনেছে, তার উদ্দেশ্য ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি রুখে দেওয়া। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বদনাম করা। সেই কাজ করছে সোরসের অর্থসহায়তায় গঠিত ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ (ওসিসিআরপি)। সোনিয়া গান্ধী ‘ফোরাম অব ডেমোক্রেটিক লিডার্স ইন এশিয়া প্যাসিফিক’ (এফডিএল–এপি) সেই চক্রান্তের শরিক। এর সঙ্গে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনও সরাসরি জড়িত। নাড্ডা বলেন, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বিদেশে গিয়ে যা বলেন, তা–ও ভারতবিরোধী। তাই এ নিয়ে সভায় চর্চা হওয়া দরকার।
বিজেপি এই অভিযোগের পাশাপাশি এ কথাও বলেছে, এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত। তাদের অভিযোগ, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চলছে, যার লক্ষ্য ভারতকে দুর্বল করা, তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি যুক্ত। কারণ, ওসিসিআরপি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্থা ‘ইউএসএআইডি’ থেকে অর্থ সাহায্য পায়। বিজেপি এই অভিযোগ এনেছে ফরাসি গণমাধ্যম ‘মিডিয়াপার্ট’–এর এক প্রতিবেদনের দৌলতে। ওই সংস্থাই ‘ওসিসিআরপি’–তে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সাহায্যের কথা প্রকাশ করেছিল।
লক্ষণীয় যে রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের সদস্যদের এসব অভিযোগ ওঠাতে পূর্ণ সহযোগিতা করেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। স্পষ্টতই, আদানি ঘুষ–কাণ্ডে কোণঠাসা সরকারপক্ষ পাল্টা আক্রমণ হেনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টিতে আগ্রহী, যার সঙ্গে তারা দেশের সুরক্ষার প্রশ্ন যুক্ত করতে চাইছে। বলতে চাইছে, আদানি ও মোদির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে বিদেশি শক্তি আসলে ভারতের বিরোধিতায় নেমেছে।
বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রকে এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত করলেও সে দেশের দূতাবাস ভারতের শাসক দলের ভূমিকা ‘হতাশজনক’ বলে মন্তব্য করেছে। দূতাবাসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পেশাগত সাংবাদিকতার বিকাশে সাহায্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র কখনো কোনো সংস্থার সম্পাকদীয় সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করে না। গোটা পৃথিবীতে তারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।