হোস্টেলে ১২০ মিনিট ধরে র্যাগিং, কয়েক ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীর মৃত্যু
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডু গত বুধবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় হোস্টেলের একটি কক্ষে র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। প্রায় ১২০ মিনিট ধরে তাঁকে র্যাগ দেওয়া হয়।
এর কয়েক ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে মারা যান তিনি। হোস্টেলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থিত। গতকাল শনিবার এ ঘটনায় সন্দেহভাজনকে একজনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ এমন বক্তব্য দিয়েছে।
গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সৌরভ চৌধুরীকে আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুর ঘটনায় ক্যাম্পাসের প্রধান হোস্টেলের তিন শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নিয়েছে তারা। ওই শিক্ষার্থীরা বর্ণনা করেছেন, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে স্বপ্নদ্বীপকে কী ধরনের নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, স্বপ্নদ্বীপকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডুকে র্যাগিংয়ের অভিযোগে আজ রোববারও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
লালবাজার পুলিশ সূত্র বলেছে, ৯ আগস্ট রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্বপ্নদ্বীপকে নানা গালাগালি, অশ্লীল মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। তাঁকে একটি কক্ষের ভেতর আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে সৌরভসহ আরও কয়েকজন ছিলেন।
স্বপ্নদ্বীপ এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে আলামত পেয়েছেন তদন্তকারীরাও। ওই র্যাগিংয়ের কারণে এই শিক্ষার্থী ট্রমার মধ্যে পড়ে যান। হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা পুলিশকে বলেছেন, স্বপ্নদ্বীপের জন্য মনোবিদ কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে সেখানেও উপস্থিত ছিলেন সৌরভ।
শুক্রবার থেকে শনিবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত হোস্টেলের বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
অভিযোগ আছে, স্বপ্নদ্বীপের মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়েছিলেন সৌরভ। তাঁকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ এ অভিযোগের তদন্ত করছে। শনিবার আদালতে সৌরভকে জামিন না দেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। সৌরভ সাক্ষীদের ভয়–ভীতি দেখাতে পারেন এবং আলামত নষ্ট করে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
আদালতে সরকারি কৌঁসুলি সৌরিন ঘোষাল বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল, তা জানা প্রয়োজন। অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে জব্দ করা ফোনটির কল তালিকা সংগ্রহ করে এটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব।’
২২ আগস্ট পর্যন্ত সৌরভকে পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আলিপুর আদালত।
এরই মধ্যে তিন শিক্ষার্থী ও হোস্টেল সুপারের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
সৌরভের আইনজীবী অরিন্দম দাসের দাবি, তাঁর মক্কেল ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি আরও বলেন, হোস্টেলে কক্ষ বরাদ্দ পেতে স্বপ্নদ্বীপকে সৌরভ ও মনতোষ মণ্ডল সহযোগিতা করেছিলেন।
আদালতে সৌরভও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।