‘নজুল জমি’ নিয়ে উত্তর প্রদেশে বিজেপির কোন্দল এবার প্রকাশ্যে

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথছবি: এএনআই

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে গেল ‘নজুল জমি’–সংক্রান্ত বিলকে কেন্দ্র করে। বিধানসভায় (নিম্নকক্ষ) সেই বিল পাস হয়ে গেলেও বিধান পরিষদে (উচ্চকক্ষ) তা আটকে দিলেন বিজেপিরই সদস্যরা। আরও বিবেচনা করে দেখার জন্য বিলটি পাঠানো হলো সিলেক্ট কমিটিতে।

এই বিলকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য ও বিজেপির প্রদেশ সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরীর লড়াই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ‘নজুল জমি বিল’ কয়েক দিন আগেই রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাস হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই এই বিল আনা হয়।

নজুল জমির অর্থ সরকারি জমি। এই জমি বা সম্পত্তি বিভিন্ন কাজে ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়া হয়। যোগী আদিত্যনাথের সরকার এখন সেই সব জমি ও স্থাপনা ফেরত পেতে আগ্রহী। তাঁর যুক্তি, ব্যক্তি ও বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে জমি ও স্থাপনা নিয়ে সরকারি উদ্যোগে সেখানে জনহিতকর কাজ শুরু করা।

এখন এটি পরিষ্কার, মুখ্যমন্ত্রী চাইলেও দুই উপমুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি চান না, ওই সব সরকারি জমি অধিগ্রহণ করা হোক। তাঁরা সরাসরিই বলেছেন, এতে রাজ্যের জনতা আরও বিজেপিবিরোধী হয়ে যাবে।

প্রশ্ন হলো, দলে এই বিভাজন সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ কেন এই বিল পাস করাতে উৎসুক। তা ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে ও বিধানসভার অলিন্দেই–বা কী করে বিনা বাধায় বিলটি পাস হলো?

দুই প্রশ্নেরই কোনো সদুত্তর নেই। কিন্তু ঘটনা হলো, গত শুক্রবার বিলটি বিধান পরিষদে পেশ হওয়া মাত্র প্রদেশ সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরী সেটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। স্পিকার মানবেন্দ্র চৌধুরী সেই প্রস্তাব মেনে নেন। সিলেক্ট কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।

শুরু থেকেই এই বিলের বিরোধিতা করে আসছে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস। বিজেপির শরিক দল আপনা দল ও নিষাদ পার্টিও এই বিলের বিপক্ষে। তারা বিলটি ‘অপ্রয়োজনীয়’ মনে করে। এসপি ও কংগ্রেস মনে করে, বিলটি আইন হলে তা হবে কালাকানুন। বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর মধ্য দিয়ে যোগীবিরোধীরা বোঝাতে পারলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা এখন আর দল বা সরকারের শেষ ইচ্ছা নয়। দলের মধ্যে যাঁরা ভিন্নমত পোষণ করেন, তাঁদের কথা ও যুক্তি শুনে তাঁকে চলতে হবে।

উত্তর প্রদেশে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এই মুহূর্তে দুই শিবিরে বিভক্ত। একদিকে রয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ ও তাঁর অনুগামীরা, অন্যদিকে দুই উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ সভাপতি। দুই উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর অন্ধ অনুগত।

যোগী শিবিরের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা তৈরির সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ না করেই বহু কেন্দ্রের প্রার্থী ঠিক করা হয়েছিল। সেটাই রাজ্যে ভোট বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বলে যোগী শিবিরের দাবি।

বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি টানাপোড়েন চলছে যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে। মোদি–শাহ জুটি চান কেশব প্রসাদ মৌর্যের মতো অনুগত কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে। কিন্তু জবরদস্তি করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যোগীর বিরোধিতা করা এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির অন্য নেতাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়। মোদি–শাহ তাই চাইছেন, মন্ত্রিসভা ও সংগঠনে বড় রদবদল ঘটিয়ে যোগীর প্রভাব কিছুটা খর্ব করতে। তবে সেটা করতে হবে অনেক অঙ্ক কষে।

এই বছরের শেষে চার রাজ্যের ভোটের সঙ্গে উত্তর প্রদেশ বিধানসভার ১০ আসনের উপনির্বাচন। অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে সেখানে বিজেপির ভরাডুবি হলে রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। সন্দেহ নেই, যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে মোদি–শাহ বিব্রত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

এই পরিস্থিতিতে ‘নজুল জমি বিল’ সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো বুঝিয়ে দিচ্ছে, দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আদিত্যনাথ খুব একটা স্বস্তিতে নেই।