সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কাকে ছাড়াই কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু
গান্ধী পরিবারের তিন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে ছাড়াই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ৮৫তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শুরু হলো। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কংগ্রেসশাসিত ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে দলের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, যেখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মোকাবিলায় দলের কৌশল কী হবে।
এই অধিবেশনের প্রথম চমক গান্ধী পরিবারের তিন প্রতিনিধি সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে ছাড়াই স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শুরু হওয়া। মল্লিকার্জুন খাড়গে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। পুরোনো কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় অস্থায়ী স্টিয়ারিং কমিটি। পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সেই কমিটির সভাতেই সিদ্ধান্ত হবে, নতুন ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের পূর্ণ ক্ষমতা সভাপতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে নাকি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সদস্যদের জিতে আসতে হবে। জি–২৩ গোষ্ঠীর দাবি ছিল, ‘অ্যাড হক’ প্রথা বা মনোনয়নের রীতি তুলে দিয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সদস্যরা জিতে আসুন। তাতে দল প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক হবে। হবে শক্তিশালীও।
আজ সকালেই দলীয় সূত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়, সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা বিকেলে রায়পুরে পৌঁছবেন। এই বিলম্ব ইচ্ছাকৃত। দলীয় সূত্র বলছে, সংগঠন চালাতে দলের সভাপতিই যে পূর্ণ ক্ষমতাবান, তাঁর ওপর যে পরিবারের কোনো প্রভাব নেই, তা বোঝাতেই স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ওই বৈঠকে তাঁরা অনুপস্থিত থাকছেন। দলের স্বার্থ দেখে সব মহলের প্রতিনিধিত্ব রাখতে মনোনয়ন পদ্ধতি, নাকি নির্বাচন কোনটি কার্যকর হবে, তা যাতে সবাই খোলা মনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। কংগ্রেসের গত সিকি শতকের ইতিহাসে এই প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শুরু হলো গান্ধীদের উপস্থিতি ছাড়াই।
স্টিয়ারিং কমিটির এক সদস্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিজেপির অন্তহীন অপপ্রচার এবার বন্ধ হওয়া দরকার। মল্লিকার্জুন খাড়গে যে ‘রবার স্ট্যাম্প সভাপতি’ নন, এবার তারা বুঝতে পারবে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি ‘স্বাধীনতা’ পেয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ কথা।’
তিন দিনের এই অধিবেশনেই ঠিক হবে আগামী দিনে দলের কৌশল কী হবে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মোকাবিলা কীভাবে করা হবে। বিভিন্ন বিরোধী দলের সঙ্গে জোট বাঁধার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের নীতি ও আদর্শগত ভূমিকা কেমন হবে, জোটের নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, কোথায় কার সঙ্গে জোট ও কাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রয়োজন, তাও ঠিক করা হবে। পাশাপাশি বিবেচিত হবে ভোটের আগে ও পরে জোটের সম্ভাব্য ছবি কেমন হতে পারে।
দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, অধিবেশনে মোট ছয়টি প্রস্তাব বিবেচিত হবে। অধিবেশনের শেষ দিন আগামী রোববার, পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তারপর হবে জনসভা। ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যের পর এআইসিসির এই পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সারা দেশ থেকে ১৫ হাজারের বেশি প্রতিনিধি রায়পুরে জড়ো হয়েছেন।