কাশ্মীরে মুসলিম অধ্যাপক বরখাস্ত, সুপ্রিমকোর্টের হস্তক্ষেপ

ভারত সুপ্রিমকোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

অধ্যাপকের নাম জহুর আহমেদ বাট। তিনি জম্মু-কাশ্মীরের এক সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। সম্প্রতি এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট আজ সোমবার সেই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।

জহুর আহমেদ বাট ডিগ্রিধারী আইনজ্ঞও। ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে দাখিল হওয়া অনেক মামলার একটির আবেদনকারী তিনি। তাঁর অপরাধ, গত ২৩ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টে হাজির হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন।

সরকারি সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছিলেন। ২৫ তারিখে জম্মু-কাশ্মীরের শিক্ষা বিভাগ তাঁকে সাসপেন্ড করে। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ সেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল (এজি) আর ভেঙ্কটরামানি ও সলিসিটর জেনারেল (এসজি) তুষার মেহতাকে আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহাকে তাঁরা যেন বিষয়টি পর্যালোচনা করার কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালতে হাজির হয়ে সওয়াল করা ও সাসপেনশনের আদেশের মধ্যে ব্যবধান মাত্র এক দিনের। সওয়াল করাই সাময়িক বরখাস্তের কারণ হলে, তা উদ্বেগের।

সুপ্রিমকোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে অধ্যাপকের সাসপেনশনের বিষয়টি আজ উপস্থাপন করেন আইনজীবী কপিল সিব্বাল। তিনি বলেন, ওই অধ্যাপক দুই দিনের ছুটি নিয়ে এখানে এসে তাঁর মতামত জানিয়েছিলেন। সুপ্রিমকোর্টে মতামত রাখার জন্য একজন অধ্যাপককে এই কারণে সাময়িক বরখাস্ত হতে হলে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রক্ষাকারী সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ–সংক্রান্ত এক গুচ্ছ মামলার শুনানি সুপ্রিমকোর্টে চলছে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সেই সাংবিধানিক বেঞ্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য চার বিচারপতি হলেন সঞ্জয় কিষাণ কল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই ও সূর্য কান্ত। কপিল সিব্বালের বক্তব্য তাঁরা মেনে নেন। বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘এমনটা হলে, সেটা তো প্রতিশোধস্পৃহা বলে মনে হবে?

এত স্বাধীনতার কথা বলে তা হলে লাভ কী?’ তুষার মেহতার উদ্দেশে বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কল বলেন, ‘এজলাসে সওয়াল করা ও সাসপেনশনের নির্দেশ কি একেবারে গায়ে গায়ে নয়?’ এজি ও এসজিকে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উপরাজ্যপালের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন। অন্য কারণ থাকলে অন্য বিষয়। কিন্তু এজলাসে সওয়াল করাই যদি অপরাধ হয়, তা হলে বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের।’

এসজি তুষার মেহতা ‘অন্য কারণ’–এর প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘খবরের কাগজে যা বেরিয়েছে, সব সময় তা সত্য হয় না। তিনি নানা আদালতে হাজির হন।’ কপিল সিব্বাল পাল্টা বলেন, ‘সেটা কারণ হলে আগেই সাসপেন্ড করা হতো, কিন্তু তা হয়নি। হলো এবার।’

প্রধান বিচারপতিও ‘টাইমিংয়ের’ বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টে এসে ৩৭০ নিয়ে মতামত জানানোর এক দিন পরেই তাঁকে সাসপেন্ড করা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই দুই ঘটনা সম্পর্কযুক্ত হলে সমস্যা এবং তেমন সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এজলাসে স্বীকার করেন যে টাইমিং ভুল। বিষয়টি নিয়ে তিনি আরও খোঁজখবর করবেন বলে জানান।

জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের অধীন স্কুল শিক্ষা বিভাগ ২৫ আগস্ট অধ্যাপক বাটকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জম্মু-কাশ্মীর সরকারি বিধি, জম্মু-কাশ্মীর সরকারি কর্মী আচরণবিধি এবং জম্মু-কাশ্মীর সরকারি কর্মীদের ছুটি নেওয়ার বিধি ভঙ্গ করেছেন। উপরাজ্যপালের অফিস এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশও দিয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টে হাজির হয়ে অধ্যাপক বাট তাঁর সওয়ালে বলেছিলেন, ‘রাজ্য পুনর্গঠন করা হয়েছিল সংবিধানের নৈতিকতা লঙ্ঘন করে। তা করার মধ্যে দিয়ে রাজ্যের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের জনগণের মতামত নেওয়া হয়নি। ওই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সংবিধানিক আধিপত্যের পরিপন্থী।’