নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে জেরবার মোদি সরকার

দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ২০ জুনছবি: এএনআই

‘নিট’ ও ‘নেট’—এই দুই সর্বভারতীয় পরীক্ষা কেলেঙ্কারি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সংসদে জেরবার করতে কোমর কষছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে, এই দুই পরীক্ষা তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম কেলেঙ্কারি।

আজ বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, গুজরাটের মতো রাজ্যে কয়েক বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে চলেছে। মধ্যপ্রদেশের ব্যাপক দুর্নীতির সুরাহা আজ পর্যন্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার সেই দুর্নীতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন।’

রাহুল বলেন, ‘একটি পরীক্ষা (নেট) বাতিল হয়েছে। অন্যটা (নিট) নিয়ে তদন্ত চলছে। জানি না, অপরাধ চক্রের মূল হোতারা ধরা পড়বেন কি না।’

কংগ্রেস সদর দপ্তরে রাহুলের পেছনে মোদি সরকারের উদ্দেশে বড় বড় করে লেখা ছিল, ‘পেপার লিক সরকার’। ৭ বছর, ৭০ লিক (প্রশ্ন ফাঁস), ‘২ কোটি ভুক্তভোগী’।

ভারতে চিকিৎসক হতে গেলে ‘নিট’ হচ্ছে পরীক্ষার প্রথম ধাপ। ইংরেজিতে এটি হলো ‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট’, সংক্ষেপে এনইইটি (নিট)। দ্বাদশ শ্রেণি পাসের পর চিকিৎসক হতে গেলে এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করা জরুরি। সর্বভারতীয় এই প্রবেশিকা পরীক্ষা ঘিরে এবার ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়, অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠিত চক্রের বিরুদ্ধেও, যাঁরা বিপুল অর্থের বিনিময়ে উত্তরপত্র লিখে দেওয়া থেকে পর্যাপ্ত নম্বর পর্যন্ত পাইয়ে দিচ্ছে। ফলে এবার দেখা গেছে, পরীক্ষার মোট নম্বর ৭২০ পেয়েছেন ৬৭ জন পরীক্ষার্থী। এই পরীক্ষার ইতিহাসে একসঙ্গে এতজন এমন নিখুঁত স্কোর কখনো করেননি।

এই ‘নিট’ পরীক্ষার নিয়ামক সংস্থা হলো ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি’ বা ‘এনটিএ’। সংস্থাটি স্বশাসিত। কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। এবার এই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসেছিলেন ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ শিক্ষার্থী। দুর্নীতির অভিযোগ ধীরে ধীরে প্রকাশ হওয়ায় গোটা বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন। সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি আসার আগে বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টেও ইতিমধ্যে বহু মামলা হয়েছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সব মামলা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তাঁরা একত্রে এই মামলা শুনবেন। এ নিয়ে গোটা দেশে ডামাডোল চলছে। লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দাবি উঠেছে ‘নিট’ বাতিলের। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার সেই দাবি মানতে এখনো প্রস্তুত নয়।

নিট পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে দিল্লিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। আজ ২০ জুন
ছবি: এএনআই

এই পরিস্থিতিতে বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে গবেষণা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘ইউজিসি-নেট’ বাতিলের সিদ্ধান্ত। গত মঙ্গলবার এই সর্বভারতীয় পরীক্ষা হওয়ার এক দিন পর ১৯ জুন কেন্দ্রীয় সরকার তা বাতিল করে দেয়।

আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গোবিন্দ জয়সোয়াল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এসেছে। সব অভিযোগের তদন্ত প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই পরীক্ষায় অনিয়মের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে।

সারা দেশে এবার ৯ লাখ পরীক্ষার্থী ইউজিসি-নেট পরীক্ষায় বসেছিলেন।

নতুন সরকারকে সংসদে হেনস্তা করতে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা ইতিমধ্যেই কোমর কষা শুরু করেছেন। নিট ও নেট-এর মতো পরীক্ষা কেলেঙ্কারি, ট্রেন দুর্ঘটনা, বুথ ফেরত সমীক্ষা করিয়ে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিকে হাতিয়ার করে শুরু থেকেই বিরোধীরা সরকারকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

সরকারকে চাপে রাখতে আগামীকাল শুক্রবার কংগ্রেস নিট ও নেট নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২৪ জুন সংসদের অধিবেশন বসছে। সেই দিনেই কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে।

নিট পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে দুর্নীতির যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তদন্তকারী সংস্থাগুলো যে তথ্য দাখিল করছে, তাতে দুর্নীতির পরিমাপ কত হাজার কোটি টাকা তা আন্দাজ করাও কঠিন। বিরোধীদের অভিযোগ, এই কেলেঙ্কারির মধ্যমণি কেন্দ্রীয় সরকার।