মমতার পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিযানে হস্তক্ষেপ করবেন না কলকাতা হাইকোর্ট
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে ছাত্রসমাজের ‘অভিযান’ বন্ধে হস্তক্ষেপ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট।
ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’-এর ডাকে আগামী মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান হতে আইনগত কোনো বাধা থাকছে না।
নবান্ন অভিযান বন্ধের আরজি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। মামলার শুনানি শেষে গতকাল শনিবার বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে তাঁরা কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না।
তবে এই অভিযান কেন বন্ধ করা হবে, আইন কী বলছে—এসব বিষয়ের জবাব হলফনামার (অ্যাফিডেভিট) মাধ্যমে আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। চার সপ্তাহ পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার জেরে মমতার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী এই অভিযানের ডাক দিয়েছেন।
৯ আগস্ট ভোরে হাসপাতালটির চারতলার সেমিনার কক্ষে নারী চিকিৎসকের লাশ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখনো মূল দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেননি তদন্তকারীরা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও নবান্ন অভিযানে সমর্থনের ঘোষণা এসেছে। রাজ্য বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী নবান্ন অভিযানে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবিলম্বে পদত্যাগ করুক। কারণ, রাজ্যের মানুষ এবার বুঝে গেছে, এই ঘটনাকে আড়াল করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই রাজ্যজুড়ে তাঁর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে।
ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামীকাল সোমবারের মধ্যে মমতাকে পদত্যাগ করতে হবে। তা না হলে তারা পরের দিন মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান করে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করবেন।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কলকাতার কলেজ স্কয়ার ও হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে জমায়েত হবেন ছাত্ররা। এরপর বেলা দুইটার দিকে তাঁরা মিছিল নিয়ে নবান্ন অভিযানে যাবেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে নবান্ন অভিযানে যাবেন।
অভিযান ঘিরে যাতে কোনো রকম আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, সেই লক্ষ্যে পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
লালবাজার অভিযান
নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকে ঘিরে ১৪ আগস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালে ভাঙচুর-লুটপাট হয়। এই ঘটনার পর বাম দল সিপিএমের যুব ও ছাত্রসংগঠনের সাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের হেডকোয়ার্টার লালবাজার থেকে নোটিশ জারি করা হয়। তাঁদের লালবাজারে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশের এমন নির্দেশের জেরে গতকাল কলকাতার একদল আইনজীবী ও গণতান্ত্রিক নারী সমিতির সদস্য একজোট হয়ে বড় মিছিল নিয়ে ‘লালবাজার অভিযানে’ অংশ নেন। তাঁরা নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার মূল আসামিদের অবিলম্বে শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান। এই ঘটনার দায় নিয়ে অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ দাবি করেন।
মিছিলকারীরা লালবাজারে যেতে চাইলে বউবাজারের বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ব্যারিকেড দিয়ে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। পরে নোটিশ পাওয়া সাত নেতা-কর্মী আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে লালবাজারে গিয়ে পুলিশের কাছে নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে আসেন। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।
গতকালও প্রতিবাদী মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিল কলকাতা। এসব মিছিল থেকে চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি ওঠে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ চাওয়া হয়।