দিল্লিতে অনশনে ‌‘র‍্যাঞ্চো’, হরতালে স্তব্ধ লাদাখ

সোনম ওয়াংচুকছবি: এক্সে পোস্ট করা ভিডিও থেকে নেওয়া

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সোনম ওয়াংচুক ও অন্য পদযাত্রীদের আটক করার প্রতিবাদে লাদাখে বন্‌ধ্‌ পালিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে দিল্লি সীমান্তে তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তে কেন্দ্রশাসিত লাদাখের লেহ ও কার্গিলের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শুরু হয় বন্‌ধ্‌। এর ফলে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। আজ বুধবারও বিক্ষোভ ও বন্‌ধে লাদাখের জনজীবন ব্যাহত।

গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে না দেওয়ায় প্রতিবাদস্বরূপ থানায় আটক ওয়াংচুকসহ লাদাখের পদযাত্রীরা মঙ্গলবার থেকে অনশন শুরু করেছেন। বুধবার সকালেও তাঁরা অনশনে অনড়।

সোনম ওয়াচুকের জীবন নিয়েই তৈরি হয়েছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমা। ওয়াংচুকের ভূমিকা পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন অভিনেতা আমির খান। সিনেমায় তাঁর চরিত্রের নাম ছিল ‘ফুংসুখ ওয়াংড়ু’ ওরফে র‍্যাঞ্চোরদাস শ্যামলদাস চ্যাঞ্চোর বা সংক্ষেপে ‘র‍্যাঞ্চো’।

মঙ্গলবার সারা দিন ওয়াংচুক ও সহপদযাত্রীদের বাওয়ানা, নারেলা ও আলিপুর থানায় আটক রাখা হয়। তিন থানায় রাখা হয়েছে পুরুষ পদযাত্রীদের। নারীদের জন্য দিল্লি পুলিশ আইন অনুযায়ী আলাদা আয়োজন করেছে। ৩৬ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও পুলিশ তাঁদের মুক্তি দেয়নি। এমনকি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশীকেও বাওয়ানা থানা কর্তৃপক্ষ ওয়াংচুকের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াংচুকদের আটকের বিরুদ্ধে করা আবেদন শুনবেন। ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে সারা দেশে ছুটি।

লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দান, সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করা ও ভঙ্গুর লাদাখের পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ওয়াংচুক আন্দোলন করছেন অনেক দিন থেকে। গোটা লাদাখ সেই আন্দোলনের সঙ্গী। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় তাঁরা রাজধানী লেহ থেকে দিল্লি পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেন গত মাসের ১ তারিখ। গত সোমবার রাতে তাঁরা কয়েকটি বাসে চেপে দিল্লির সিংঘু সীমান্তে এলে হরিয়ানা ও দিল্লির পুলিশ তাঁদের আটকায়। পদযাত্রীদের তিনটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এক মাস ধরে যাত্রা চলাকালে তাঁরা সর্বত্র মানুষকে পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বুঝিয়ে এসেছেন।

আটক হওয়ার আগে ওয়াংচুক সামাজিক মাধ্যমে জানান, তাঁরা চেয়েছিলেন রাজঘাটে গান্ধীজির সমাধিতে প্রার্থনা জানিয়ে সরকারের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করবেন। আগাগোড়া তাঁদের এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক। অশান্তি সৃষ্টি তাঁদের উদ্দেশ্যও নয়। কিন্তু দিল্লি ও হরিয়ানার পুলিশ তা করতে দিল না।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা সত্ত্বেও পদযাত্রীদের তারা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওয়াংচুকরা আবার পদযাত্রা করে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আবার আটক করা হয়।

গত মঙ্গলবারেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই আটকের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, কৃষকদের মতো লাদাখের জনগণও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঔদ্ধত্য ভাঙবেন। তাঁর তৈরি চক্রব্যূহ ভেঙে দেবেন। লাদাখের জনতার আওয়াজ মোদিকে শুনতেই হবে।

বাওয়ানা থানায় প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশীও মঙ্গলবার এক্সে লেখেন, উপরাজ্যপালের এই স্বৈরাচারী আচরণ ঠিক নয়। লাদাখের জনতা ওয়াংচুকের সঙ্গে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার লড়াই শুরু করেছেন। দিল্লির মানুষ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। লাদাখ ও দিল্লি দুই জায়গাতেই উপরাজ্যপালের শাসন শেষ হওয়া দরকার।

একইভাবে সমালোচনা করেছেন আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এক্সে তিনি লিখেছেন, কখনো কৃষকদের, কখনোবা লাদাখিদের দিল্লিতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দিল্লি কি কারও পৈত্রিক সম্পত্তি? অস্ত্রহীন শান্তিপ্রিয় মানুষদের কিসের এত ভয়?

ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আদিবাসী–অধ্যুষিত এলাকাগুলো হয় স্বশাসিত। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার সিদ্ধান্ত সেখানকার অধিবাসীরাই নিয়ে থাকেন। স্বশাসিত সেই এলাকার জমির অধিকারও থাকে তাঁদেরই। আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরার এলাকা বিশেষ ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত। লাদাখ তার বিশেষ চরিত্রগত কারণে ওই তফসিলের আওতায় আসতে চায়। পদযাত্রীদের বক্তব্য, ওই মর্যাদা না পেলে খনিজ পদার্থে বোঝাই লাদাখ ক্রমেই বৃহৎ সংস্থার হাতে চলে যাবে যা মারাত্মক ক্ষতি করবে হিমালয়ের ভঙ্গুর পরিবেশকে।