মিয়ানমার থেকে ৯০০ জঙ্গি প্রবেশ করতে পারে, এই প্রতিবেদন প্রত্যাহার করল মণিপুর সরকার

এক সপ্তাহ আগে গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে মণিপুর সরকার জানিয়েছিল, ৯০০ কুকি জঙ্গি ২৮ সেপ্টেম্বর বা এর আগে-পরে মিয়ানমার থেকে রাজ্যে প্রবেশ করে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসা চিঠি এবং তাতে উল্লিখিত নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই হামলার প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় নিজেদের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন উল্লেখ করে মণিপুর সরকার নিজেই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং ও রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক রাজীব সিং এক যৌথ বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের (সিএমও) দাবিকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ করে বসেন। বিবৃতিতে তাঁরা দাবি করেন, ৯০০-এর বেশি কুকি জঙ্গি মিয়ানমার থেকে রাজ্যে প্রবেশ করার যে তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাওয়া গিয়েছিল, তা ভিত্তিহীন। বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহের পর দেখা গেছে, মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দা তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই।

এই যৌথ বিবৃতির পর মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের দপ্তর রাজ্যের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তর এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিয়ানমার থেকে ৯০০ কুকি জঙ্গি প্রবেশের বিবৃতিটি ফিরিয়ে নেয়।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পুলিশের মহাপরিচালক তাঁদের বিবৃতিতে বলেছেন, মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীরা চূড়ান্ত সতর্কতা বজায় রেখে কাজ করছেন। সব নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া হবে। তাঁদের সম্পত্তির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে। কোনো রকম গুজব বা ভিত্তিহীন তথ্য বিশ্বাস না করতেও তাঁরা রাজ্যের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

‘গুজব পরিবেশন করছে রাজ্য সরকার’

মণিপুর পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ, ভিত্তিহীন তথ্যকে গোয়েন্দা তথ্য হিসেবে চালিয়ে সরকার নিজেই গুজব পরিবেশন করেছে। আবার তারাই এখন মানুষকে বলছে গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকতে। প্রথম আলোর কাছে ‘এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন মণিপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হওয়া এবং তা ভুল প্রমাণিত হওয়া থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে বিজেপিশাসিত রাজ্যের (মণিপুর) মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দপ্তরের আদান-প্রদান ও সহযোগিতা বেশ বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে।

পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল

এক সপ্তাহ আগে মণিপুর সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিংহের দেওয়া জঙ্গি প্রবেশের গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে রাজ্য ও গোটা দেশে বিষয়টি নিয়ে প্রবল বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযোগ, এই গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে তাদের আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি।

তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্পিয়ার কোরের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছিল, ‘নিরাপত্তা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া ওই তথ্যের গুরুতর প্রভাব রয়েছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যালয়কে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে শিগগিরই যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’

কুকি সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন কুকি-ইম্পির তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৯০০ কুকি জঙ্গি মণিপুরে প্রবেশ করবে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। কুকিদের দানবীয় ভাবমূর্তি সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপিত করতেই এভাবে তথ্য বিকৃতি করা হয়।

কুকি-জোমি সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়ে কুকি-ইম্পির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে আরও বড় ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে। এর জন্য তাদের সতর্ক থাকতে হবে।

পর্যবেক্ষকেরাও মনে করছেন, এরই মধ্যে যথেষ্ট সংঘাতের মাঝে থাকা রাজ্যটি আরও বৃহত্তর সংঘাতের পথে যাচ্ছিল। জঙ্গি হামলার সতর্কতা সেই বৃহত্তর সংঘাতের ইঙ্গিত। কিন্তু পরিস্থিতি গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে বুঝতে পেরে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের চাপে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার পিছু হটতে বাধ্য হলো। প্রত্যাহার করে নিল নিজেদের জঙ্গি হামলাসংক্রান্ত ভিত্তিহীন গোয়েন্দা প্রতিবেদন।