উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা আইন বৈধ ও সাংবিধানিক: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা আইন অসাংবিধানিক নয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের দেওয়া রায় খারিজ করে আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিলেন, ২০০৪ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের তৈরি মাদ্রাসা আইন বৈধ ও সাংবিধানিক।
এই রায়ের ফলে উত্তর প্রদেশের সাড়ে ১৬ হাজার স্বীকৃত মাদ্রাসার ১৭ লাখ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ ঘিরে গড়ে ওঠা অনিশ্চয়তা কেটে গেল। মাদ্রাসাগুলো চালু রাখতেও আর কোনো বাধা থাকল না।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর এজলাস আজ মঙ্গলবার ওই রায় দেওয়ার পাশাপাশি জানিয়েছেন, মাদ্রাসাগুলো দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষার সনদ দিতে পারবে। তবে তারা ফাজিল ও কামিল, অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিতে পারবে না। যেহেতু তা ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনের (ইউজিসি) বিধিনিয়মের পরিপন্থী।
উত্তর প্রদেশে ২০০৩ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর সমাজবাদী পার্টির নেতা মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব মাদ্রাসা বোর্ড আইন চালু করেছিলেন। ২০১৭ সালে বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যের মাদ্রাসাগুলোর সমীক্ষা করান। খতিয়ে দেখা হয়, মাদ্রাসাগুলোয় বেআইনিভাবে বিদেশি অনুদান আসছে কি না। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে দিতেও উদ্যোগী হন।
মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে সরকারি স্তরে বিতর্ক শুরুর পর অংশুমান রাঠোর নামে এক ব্যক্তি এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেন। তিনি আবেদনে বলেন, মাদ্রাসা আইন অসাংবিধানিক, কারণ তা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রবিরোধী।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট গত মার্চে ওই আইন অসাংবিধানিক বলে রায় দেন। রায়ে বলা হয়েছিল, ওই আইন ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করছে। রায়ে মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুদের সাধারণ স্কুলব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসার নির্দেশও রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার রায়ে বলেন, শীর্ষ আদালত মাদ্রাসা শিক্ষা আইনের বৈধতা বহাল রাখছেন। ওই আইন সাংবিধানিক। দৈনন্দিন মাদ্রাসা প্রশাসনে সেই আইন সরাসরি হস্তক্ষেপও করে না। রায়ে বলা হয়, ওই আইনে কিছু ধর্মীয় প্রশিক্ষণ আছে বলে তা অসাংবিধানিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রবিরোধী হতে পারে না। তবে ওই আইনে ফাজিল ও কামিল ডিগ্রি দেওয়া যায় না। ইউজিসির গাইডলাইনের পরিপন্থী বলে তা অসাংবিধানিক।
সুপ্রিম কোর্ট জানান, ওই আইন উত্তর প্রদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা শেষে পড়ুয়ারা যাতে উপার্জনক্ষম হন, তা নিশ্চিত করে। ওই বিষয়ে রাজ্যের দায়বদ্ধতা রক্ষা করে।