মোদি না থাকলে ভারতের প্রতিটি শহরে আফতাব জন্মাবে: আসামের মুখ্যমন্ত্রী
আগামী মাসের শুরুতে গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে শনিবার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এ সময় তিনি বলেন, তৃতীয়বারের মতো বিজেপিকে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় ফেরানো উচিত। এ জন্য আরও একবার গুজরাটে বিজেপিকে জেতানো প্রয়োজন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে দিল্লিতে ‘লিভ ইনে’(বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক) থাকা তরুণী শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বিশ্বশর্মা। ঘটনাটিকে ‘লাভ জেহাদ’ বলে বর্ণনা করেন তিনি। দাবি করেন, এ ঘটনার পেছনে হিন্দু নারীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করার চক্রান্ত রয়েছে।
গত মে মাসে শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় তাঁর ‘লিভ ইন’ সঙ্গী আফতাব পুনাওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা আরও বলেন, ‘দেশে যদি শক্তিশালী নেতা না থাকে, তাহলে প্রতিটি শহরে আফতাবের মতো ছেলে জন্মাবে। আমরা তখন আর আমাদের সমাজকে বাঁচাতে পারব না। তাই ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদিকে আবার জেতানো খুব জরুরি।’
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার বেছে বেছে সেই সব জবরদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা শুরু করে, যেখানে বাঙালি মুসলমানদের বাড়িঘর আছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
২০২১ সালে আসাম নির্বাচনের আগেও সেখানে একই কায়দায় প্রচার চালিয়েছিলেন বিশ্বশর্মা। আসামে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। তাই ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে বিশ্বশর্মা বাঙালি মুসলমানের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারণা চালান। নির্বাচনের পর আসামে গত দেড় বছরে মুসলিম সম্প্রদায়কে নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার বেছে বেছে সেই সব জবরদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা শুরু করে, যেখানে বাঙালি মুসলমানদের বাড়িঘর আছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত নথিভুক্ত মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি মাদ্রাসা বন্ধ করা হয়েছে, যেগুলো ব্যক্তিগত অনুদানে চলত। বাঙালি মুসলমানদের চিহ্নিত করতে ও তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে আসামে আরও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আসামে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত নথিভুক্ত মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি মাদ্রাসা বন্ধ করা হয়েছে, যেগুলো ব্যক্তিগত অনুদানে চলত। বাঙালি মুসলমানদের চিহ্নিত করতে ও তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে আসামে আরও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গুজরাটে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে একই মেরুকরণের পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন বিশ্বশর্মা। রাজ্যটিতে ২০০২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের। তবে গুজরাটে মুসলিম জনসংখ্যা ১০ শতাংশের কিছু কম। ফলে মেরুকরণের এই রাজনীতি সেখানে বিজেপির কোনো বাড়তি সুবিধা করে দেবে কি না, বলা মুশকিল।
১৯৯০ সাল থেকে গুজরাটে টানা ক্ষমতায় আছে বিজেপি। এ কারণে ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিজেপি যথেষ্ট চাপের মুখে পড়েছিল। ওই নির্বাচনের একটা সময় মনে হয়েছিল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারে। শেষ পর্যন্ত বিজেপির থেকে ২০টি আসন কম পায় কংগ্রেস। ফলে এখন গুজরাটে কিছুটা মেরুকরণের রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে বিজেপি। পূর্ব ভারতে হিন্দুত্ববাদের নতুন নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে সামনে এনে পশ্চিম ভারতে মেরুকরণের এই রাজনীতি কাজ দেয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।