শেখ হাসিনাকে কি আপাতত ভারতেই থাকতে হচ্ছে
সরকারপ্রধানের পদ ও দেশ ছেড়ে গত সোমবার ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান সাময়িক। তিনি দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। বরং যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
কিন্তু বাংলাদেশ ত্যাগের তিন দিন পরও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয় কিংবা চূড়ান্ত গন্তব্যের বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। এর মধ্যে শুধু ভারত সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে দিল্লিতে ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ রাখা হয়েছে।
এর মধ্যেই আজ বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর, শেখ হাসিনা লন্ডনে যেতে চান। সেখানে তাঁর ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক থাকেন। টিউলিপ যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য, সরকারের সিটি মিনিস্টারের দায়িত্বে রয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর, শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘কৌশলগত বাধা’ আছে। আর সেটা যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইন ঘিরে।
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, আশ্রয় বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য কাউকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এমনকি যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকেও কেউ দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন না।
সে ক্ষেত্রে ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর সেখানে অবস্থান করতে হবে। এরপরই যে কেউ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন।
শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সমস্যাটা এখানেই। তাঁর যুক্তরাজ্যের বৈধ ভিসা নেই। এমনকি এখন তাঁর কাছে কূটনৈতিক বা অফিশিয়াল কোনো পাসপোর্ট নেই। কাজেই রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে হলে শেখ হাসিনাকে পাসপোর্ট–ভিসা করিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর দেশটিতে অবস্থান করতে হবে। এরপরই তিনি আশ্রয় চাইতে পারবেন।
এ পরিস্থিতিতে দিল্লির একটি সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, যত দিন রাজনৈতিক আশ্রয়–সংক্রান্ত জটিলতা না মিটছে, তত দিন শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ভারত সরকারের। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দিল্লি, লন্ডন আর হাসিনার মধ্যে আলাপ–আলোচনার পর পরিস্থিতি এমনটাই দাঁড়িয়েছে।
আশ্রয় চাওয়া না–চাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, ‘যেসব ব্যক্তির প্রয়োজন, তাদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের গর্বিত রেকর্ড রয়েছে। তবে আশ্রয় বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য কাউকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার কোনো বিধান নেই।’
ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘যাঁদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন, তাঁদের প্রথমে নিরাপদ যে দেশে পৌঁছান, সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। এটি সুরক্ষার দ্রুততম পথ।’
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্রের কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, শেখ হাসিনাকে আপাতত ভারতে থাকতে হতে পারে।
এদিকে শেখ হাসিনার ভারত থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভালো আছেন, এখন দিল্লিতে আছেন৷ আমার বোন ওনার কাছে আছেন। আমার বোন তো দিল্লিতে থাকেন। তিনি ভালো আছেন, তবে তাঁর খুবই মন খারাপ।’