১৫০ বছরে ঐতিহ্যবাহী কলকাতা চিড়িয়াখানা, নতুন অতিথি দুটি

কলকাতা চিড়িয়াখানার ১৫০ বছরে পা দেওয়া উপলক্ষে মঙ্গলবার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

দেড় শ বছরে পা দিয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী কলকাতা চিড়িয়াখানা। ১৮৭৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এই চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়। চিড়িয়াখানার প্রথম সুপার ছিলেন রামব্রহ্ম সান্যাল।

কলকাতার আলীপুরে অবস্থিত চিড়িয়াখানাটি আলীপুর চিড়িয়াখানা নামে অধিক পরিচিত। গত মঙ্গলবার চিড়িয়াখানাটির ১৫০ বছরে পা দেওয়া উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেদিন নতুন রূপে সাজানো হয় চিড়িয়াখানাটি। উদ্বোধন করা হয় হয় প্রাণীদের জন্য নতুন একটি ‘এনক্লোজার’। চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি হিসেবে আসে দুটি নতুন প্রাণী। একটি মাউস ডিয়ার (শজারুর আকারের এই হরিণ দেখতে অনেকটা ইঁদুরের মতো)। গায়ের চামড়া আবার হরিণের মতো ডোরাকাটা।

অন্য নতুন প্রাণীটি হলো মালয়ান টেপার। বিচিত্র চেহারার প্রাণীটি দেখতে কয়েকটি প্রাণীর মিশেল। এটি দেখতে কখনো হাতির মতো, কখনো মনে হবে গন্ডার আবার কখনো শূকরের মতো। গায়ের রং সাদা–কালো। দেখে মনে হবে, আলাদা দুটি চাদর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটির দেহের ওপর।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। আরও ছিলেন চিড়িয়াখানার পরিচালক শুভংকর সেন গুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গের ফরেস্ট ফোর্সের প্রধান নীরজ সিংহলসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা।

অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেওয়া হয়, কলকাতা চিড়িয়াখানার সার্ধশত বর্ষ উদ্‌যাপন বছরজুড়ে চলবে। থাকবে নানা আয়োজন। সেদিন চিড়িয়াখানার প্রথম পরিচালক রামব্রহ্ম সান্যালের একটি ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর নাতি সোমনাথ সান্যাল।

কলকাতা চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি মাউস ডিয়ার
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

যেভাবে যাত্রা শুরু আলীপুর চিড়িয়াখানার

১৮০০ সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল আর্থার ওয়েলেসলি ব্যারাকপুরে তাঁর গ্রীষ্মনিবাসে ছোট একটি পশু উদ্যান গড়েছিলেন। পরে তিনি লন্ডনে ফিরে গেলে স্কটিশ চিকিৎসক ও প্রাণিবিদ ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন ওই পশু উদ্যানের পশুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন। ১৮৭৫ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস সপ্তম এডওয়ার্ড কলকাতার সে সময়ের অভিজাত এলাকা আলীপুরে একটি চিড়িয়াখানা গড়ার উদ্যোগ নেন। চিড়িয়াখানার প্রথম সুপার নিযুক্ত হন রামব্রহ্ম সান্যাল।

সেই চিড়িয়াখানা গোটা ভারতের ঐতিহ্য হয়ে ওঠে। এটি আজও কলকাতার গর্ব। প্রতিদিন দেশ–বিদেশের কতশত পর্যটক আর প্রাণীপ্রেমী এই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে ও প্রাণীদের দেখতে আসেন।

চিড়িয়াখানা উদ্বোধনের পর এর প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল দৈত্যাকার একটি আলডাব্রা কচ্ছপ। কচ্ছপটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অদ্বৈত’। সেটির আদিনিবাস ছিল সিসিলি দ্বীপ। সেখান থেকে ১৮৭৫ সালে কচ্ছপটি কলকাতা চিড়িয়াখানায় আনা হয়। ব্রিটিশ নাবিকেরা সেটিকে নিয়ে এসেছিলেন। ২০০৬ সালে চিড়িয়াখানাতেই মারা যায় অদ্বৈত। সেটি ২৫০ বছরের বেশি সময় জীবিত ছিল।

কলকাতা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার পর ময়মনসিংহের তৎকালীন রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চিড়িয়াখানার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। গড়া হয় ময়মনসিংহ এনক্লোজার। তিনি নানা পশুপাখি সরবরাহ করে সহায়তা করেন। মহীশুরের রাজা কৃষ্ণরাজ ওয়াদিয়ার তাঁর পশু উদ্যান থেকে বহু পশু ও প্রাণী দান করেছিলেন এই চিড়িয়াখানায়। তা ছাড়া আগে ব্যারাকপুরে প্রতিষ্ঠা পাওয়া পশুশালার সব প্রাণীও আনা হয় এই চিড়িয়াখানায়।

কলকাতা চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি মালয়ান টেপার
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতা চিড়িয়াখানায় হাতি, ঘোড়া বাঘ, ভালুক ছাড়া আরও রয়েছে বেঙ্গল টাইগার, আফ্রিকান সিংহ, জাগুয়ার, জলহস্তী, গন্ডার, জিরাফ, জেব্রা, এমু পাখি, উট, উটপাখি, চার সিংবিশিষ্ট ভেড়াসহ আরও বেশ কিছু প্রাণী। সরীসৃপ ভবনে আছে নানা প্রজাতির সাপ।

শিম্পাঞ্জি ভবন, বনমানুষ ভবন, হস্তী ভবন, প্যানথার ভবন, বাঘ, সিংহ, গন্ডার ও জলহস্তীর জন্য ওপেন এনক্লোজার। পাখিদের জন্য রয়েছে আলাদা স্থান। শীতকালে চিড়িয়াখানার ঝিলে দূরদূরান্ত থেকে চলে আসে অনেক পরিযায়ী পাখি। শীত বিদায় নিলে তারা চলে যায়।