নির্বাচনী বন্ডের তথ্য মঙ্গলবারেই জমা দিতে হবে: সুপ্রিম কোর্ট
নির্বাচনী বন্ড কারা কিনেছে ও কোন রাজনৈতিক দলকে দিয়েছে, সেসব তথ্য কাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন তার ওয়েবসাইটে ১৫ মার্চের মধ্যে তা তুলবে, যাতে জনগণ সবকিছু জানতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) যাবতীয় আপত্তি নস্যাৎ করে আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেন।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি জি বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ এ রায় দিয়ে বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না করার জন্য এসবিআইয়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার যে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তার বিবেচনা সর্বোচ্চ আদালত এখনই করছেন না। এসবিআই রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে ওই আবেদন বিবেচনা করতে তাঁরা বাধ্য হবেন।
ভারতের নির্বাচনকে কালোটাকা থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনী বন্ডপ্রথা চালু করেছিল। ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট সেই প্রথা ‘অসাংবিধানিক, গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর ও সংবিধান পরিপন্থী’ বলে রায় দিয়েছিলেন। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, কে কোন দলকে চাঁদা দিচ্ছে, তা জানার পূর্ণ অধিকার মানুষের রয়েছে। কারণ, ওই গোপনীয়তার আঁধারে চাঁদা দিয়ে শিল্পপতিদের সরকারের কাছ থেকে কাজ আদায়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই ২০১৮ সাল থেকে ছয় বছর ধরে কারা কত টাকার বন্ড কিনেছে ও কোন দলকে তা দিয়েছে, এটি ৬ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছিল।
এসবিআই সেই নির্দেশ না মেনে গত ৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে এক আবেদনে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়। এসবিআইয়ের পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে আজ সময় বাড়ানোর সমর্থনে নানা কারণ দেখান। তিনি বলেন, বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে সব তথ্য নির্ভুলভাবে জমা দেওয়ার স্বার্থেই।
কারণ, গোপনীয়তা রক্ষা এই ব্যবস্থার বিশেষ দিক। প্রধান বিচারপতি তাঁর সব আরজি খারিজ করে জানতে চান, ‘রায় বের হওয়ার পর থেকে ২৬ দিন ধরে এসবিআই তাহলে কী করেছে? কত দূর কাজ এগিয়েছে? কেন সময়সীমা পার হওয়ার দুই দিন আগে সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হলো, সবকিছু যখন তাদের হেফাজতে রয়েছে?’
সময়সীমা বাড়ানোর আরজিতে আপত্তি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার চায় না এসবিআইয়ের কাছে জমা থাকা বন্ড–সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য লোকসভা ভোটের আগে জনগণ জেনে যাক।
২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত মোট ১২ হাজার কোটি রুপি রাজনৈতিক দলগুলো পেয়েছে। তার মধ্যে শুধু বিজেপিই পেয়েছে ৬ হাজার ৫৬৪ কোটি রুপি। কংগ্রেস ১ হাজার ১৩৫ কোটি। তৃণমূল কংগ্রেস ১ হাজার ৯৬ কোটি। এই হিসাব জানাজানি হলেও কোন দল কার কাছ থেকে কত পেয়েছে—এ ব্যবস্থায় তা গোপন রাখা হয়।
এই গোপনীয়তা নিয়ে এত বছর নানা প্রশ্ন উঠেছে। এসবিআই মারফত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে শাসক দল সরকারি সাহায্যে শিল্পপতিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সুপ্রিম কোর্ট সেই সন্দেহ ও অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি রায়ে বলেছিলেন, শাসক দলকে চাঁদা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে শিল্পপতিরা কাজ আদায় করতে পারেন। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সব তথ্য সাধারণের অবগতির জন্য উন্মুক্ত থাকা দরকার। সবার জানার অধিকার আছে কে কাকে কত অর্থ সাহায্য করছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। সে কারণেই সময়সীমা বাড়ানোর আরজি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বিরোধীরা মনে করছেন, সব তথ্য প্রকাশিত হলে স্পষ্ট হবে কোন শিল্পপতি কত টাকা বিজেপিকে দিয়েছেন। ওই সময়ে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে কি না। কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল বারবার অভিযোগ করছে, হাতে গোনা কিছু শিল্পপতির জন্য মোদি সরকার কাজ করে চলেছে।