সীমান্তে ভুটান-চীন বোঝাপড়া, নজর রাখছে ভারত

ডোকলাম সীমান্তে চীনের সেনাসদস্যদের টহল। এই সীমান্ত নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে বেইজিংয়ের
ফাইল ছবি: এএফপি

সীমান্ত বিরোধের অবসানে ভুটান ও চীন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। দুই দেশ এই বিষয়ে যে চুক্তি করেছে, তাকে ‘তিন পদক্ষেপ রোডম্যাপ’ বলা হয়েছে। ভারত এই নতুন বোঝাপড়া সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করছে। গত বৃহস্পতিবার দুই দেশ ওই চুক্তিতে সই করেছে। এক বিবৃতিতে ভুটান জানিয়েছে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়োনপো টানডি দোরজি ও চীনের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উ জিয়াংঘাও ওই তিন পদক্ষেপ রোডম্যাপ অনুচুক্তি বা সমঝোতাপত্রে সই করেছেন।

অনুচুক্তির লক্ষ্য, পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করা। এই অনুচুক্তি সীমান্ত বিরোধ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নতুন প্রেরণা জোগাবে বলে ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ভার্চ্যুয়াল চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত সান ওয়েডং ও ভারতে ভুটানের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল ভেটসপ নামগিয়াল।

চার বছর আগে ২০১৭ সালে ডোকলামে চীনের রাস্তা তৈরিতে বাধা দিয়েছিল ভারত। ডোকলাম এমন একটা স্থান, যার অবস্থান ভারত, চীন ও ভুটানের সীমান্তে এবং যে অংশ নিয়ে বিরোধ তা ভুটানের বলে তারা দাবি জানিয়েছিল। সে সময় টানা ৭৩ দিন ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। চার বছর পর সেই চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মেটাতে ভুটানের অনুচুক্তি অবশ্যই ভারতের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে চীন ও ভুটানের মধ্যে কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক আজও স্থাপিত হয়নি। দুই দেশে কারও দূতাবাসও নেই।

চুক্তি সইয়ের পরপরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে সতর্ক মন্তব্য করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত অনুচুক্তি আমাদের নজর কেড়েছে।

ভুটান ও চীন ১৯৮৪ সাল থেকে নিজেদের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। ভারতও একইভাবে সীমান্ত বিরোধের অবসানে চীনের সঙ্গে আলোচনা করছে।’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, চুক্তির আগে ভারতের সঙ্গে ভুটান আলোচনা করেছিল কি না। অরিন্দম বাগচি তার কোনো জবাব দেননি।

ভুটান বলেছে, পারস্পরিক সদিচ্ছা, বোঝাপড়া ও মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতার মধ্য দিয়ে এই রোডম্যাপের বাস্তবায়ন সীমান্ত বিরোধের পরিসমাপ্তি ঘটাবে, যা দুই দেশের পক্ষেই গ্রহণীয় হবে।

ভুটান আরও জানিয়েছে, সীমান্ত বিরোধ নিরসনে ১৯৮৮ সালের যৌথ ইশতেহার এবং ১৯৯৮ সালে ভুটান-চীন সীমান্ত শান্তি, স্থিতাবস্থা ও সুস্থিতি রক্ষার চুক্তির আলোয় এই অনুচুক্তি বা বোঝাপড়ায় পৌঁছানো হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কুনমিংয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞ কমিটির দশম আলোচনায় এই তিন পদক্ষেপ রোডম্যাপ চুক্তিতে রাজি হয়েছিল।

চীনের সঙ্গে ভুটানের সীমান্ত ৪০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। অনুচুক্তি বাস্তবায়ন করে চীন ডোকলামে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করলে ভারতের ঘাড়ে তারা নিশ্বাস ফেলবে। এই অনুচুক্তি বা বোঝাপড়ায় ভারত তাই যারপরনাই চিন্তিত। যদিও এখনই সেই বিষয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। সুচিন্তিত ও সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় শুধু বুঝিয়ে দিয়েছে, বিষয়টির দিকে ভারতের দৃষ্টি রয়েছে।