সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি এলাকা বাড়ানোর বিরোধিতা করে প্রস্তাব
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের টহলের সীমানা বাড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিধানসভায় প্রস্তাব আনছে মঙ্গলবার।
গত ১১ অক্টোবর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নির্দেশনায় বিএসএফ-এর টহলের এলাকা ১৫ কিলোমিটারের পরিবর্তে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারতের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফ বা ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। এই বিএসএফের সীমান্ত এলাকায় নজরদারির এখতিয়ার ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা। বিএসএফের জওয়ানদের সীমান্তের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে টহল, তল্লাশি, সন্দেহজনক পণ্য বাজেয়াপ্ত, চোরাকারবারিদের অনুপ্রবেশ ও অনুপ্রবেশকারীদের ধরপাকড় করার অধিকার রয়েছে।
এ দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বর্ধিতকরণের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি পাঞ্জাব সরকারও। পাঞ্জাব সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্য বিধানসভায় ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাশ করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পর প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাঁর চিঠিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিএসএফের সীমান্তে নজরদারি এলাকা বর্ধিতকরণ সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।
মমতা বলেছেন, ‘আমাদের সীমান্তে এমন সিদ্ধান্তের দরকার নেই। এখানে আমাদের সঙ্গে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই আমরা চাই না বিএসএফের নজরদারি এলাকা ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে সীমান্ত এলাকার মানুষজনের শঙ্কা বাড়াতে।’
এ দিকে গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সংবিধানের ১৮৮ ধারায় আমরা বিএসএফের নজরদারির এলাকা বর্ধিতকরণ নিয়ে রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে একটি প্রস্তাব আনছি মঙ্গলবার। এই প্রস্তাব নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা হবে দেড় ঘণ্টা। এ দিন বিধানসভার অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএসএফের নজরদারি এলাকা বাড়ানোর নির্দেশ আমরা মানতে পারছি না। আমরা চাই ১৫ কিলোমিটার এলাকার নজরদারির দায়িত্বেই থাকুক বিএসএফ।’
তবে বিজেপির পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রস্তাব উত্থাপিত হলে আমরা এর বিরোধিতা করব। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএসএফের এলাকা বাড়ানোর প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা দেশের স্বার্থেই নিচ্ছে। আমরাও চাই না সীমান্ত দুর্বল রেখে অনুপ্রবেশ বাড়াতে। তাই এই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিচ্ছি।’
গত শুক্রবার কলকাতায় আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লা। তিনি সল্টলেকের হিডকো ভবনে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ভূমি সচিবের সঙ্গে। এই বৈঠকে তিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া, চেকপোস্ট ও আউটপোস্ট নির্মাণ ও সীমান্তের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ভুটান সীমান্তে নতুন করে ৭টি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট গড়া হবে। এমনকি যেসব এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি সেই সব এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
ওই বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটান সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। দ্রুত স্থল সীমান্ত আধুনিকীকরণ করা হবে। এই তিন আন্তর্জাতিক সীমান্ত পথে সীমান্ত বাণিজ্যের আরও গতি আনতে হবে। এই লক্ষ্যে সীমান্তের পরিকাঠামো উন্নত করা হবে। সীমান্তের আরও ২৯৮ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১৮২ কিলোমিটার বেড়া দেওয়ার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।