বাইডেনকে ভারতের কৃষক নেতাদের আরজি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাতে ভারতীয় কৃষকদের উদ্বেগের প্রসঙ্গটি তোলেন, সে জন্য আন্দোলনকারী নেতারা জো বাইডেনকে অনুরোধ জানালেন। বৈঠকের দিনেই এই অভিনব অনুরোধ জানিয়ে টুইট করেন পশ্চিম উত্তর প্রদেশের ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) সভাপতি ও সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতা রাকেশ টিকায়েত।

‘বাইডেন স্পিক আপ ফর ফার্মার্স’ হ্যাশট্যাগ দেওয়া ওই টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে টিকায়েত বলেছেন, ‘প্রিয় প্রেসিডেন্ট, মোদি সরকারের আনা তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আমরা ভারতীয় কৃষকেরা আন্দোলন করছি। গতে ১১ মাসে ৭০০ জন বিক্ষোভকারী কৃষক মারা গেছেন। আমাদের বাঁচাতে এই কালা আইনগুলো প্রত্যাহৃত হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের সময় অনুগ্রহ করে বিষয়টি উত্থাপন করুন।’

অভিনব এই আবেদন ছাড়াও কৃষকনেতারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয়দের প্রতিবাদ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই অনুরোধ মেনে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয়দের একাংশ হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভও দেখান।

ভারতের কৃষক আন্দোলনের আন্তর্জাতিকীকরণ অনেক দিন আগেই হয়ে গেছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে দিল্লির সীমান্তে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করার পর আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানাতে এগিয়ে এসেছেন মার্কিন গায়িকা রিয়ান্না, সুইডেনের জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আইনজীবী মীনা হ্যারিস, অভিনেত্রী ও মডেল আমান্ডা সার্নি, গায়ক জে সেনরা। তাঁরা সবাই কৃষক আন্দোলনের পক্ষে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কথা বলেছিলেন।

এবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সরব হতে অনুরোধ জানালেন কৃষকনেতারা। এবং তা-ও মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে। এই আবেদন অভিনবই শুধু নয়, অভূতপূর্বও। দেশের সমস্যার সমাধানে বিদেশি রাষ্ট্রনায়ককে এভাবে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ আগে কখনো করা হয়নি। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, কৃষকনেতারা মরিয়া। সরকারি ‘ঔদাসীন্যে’ বিরক্ত। অথচ আন্দোলন থেকে সরে আসতে রাজি নন। আন্দোলনকারী কৃষকনেতাদের এই আবেদন অবশ্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির পরিপন্থী। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদির এমন গুরুত্বপূর্ণ সফরের সময়।

কৃষকনেতারা শুরু থেকেই তিন আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁদের অভিযোগ, কৃষক হিতের নামে এই আইন কৃষকসমাজকে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পুঁজিপতিদের দাস ও ক্রীড়নকে পরিণত করবে। এই আইনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা ‘এমএসপি’ নিশ্চিত করার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এসএসপি বজায় রাখার বিষয়ে সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও আন্দোলনকারী নেতারা আশ্বস্ত নন। তাঁদের দাবি, মৌখিক অঙ্গীকারের বদলে সরকারকে আইনি রক্ষাকবচ দিতে হবে। সে জন্য তাঁরা নতুন আইন প্রণয়নের দাবিতে সরব। কিন্তু সরকার তাতে রাজি নয়। আইনও বাতিল করতে নারাজ। ফলে দুই পক্ষে ১১ দফা আলোচনা সত্ত্বেও মীমাংসা সূত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি।