পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের ফের বিবাদ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ফের বিবাদ শুরু হয়েছে।
মমতা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। আর ধনখড় রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান।
ধনখড় সুপ্রিম কোর্টের সাবেক আইনজীবী। তিনি একসময় বিজেপির সাংসদও ছিলেন। এক বছর দুই মাস ধরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে ধনখড় নিয়োজিত হওয়ার পর থেকে মমতার সঙ্গে তাঁর সংঘাত শুরু হয়। কখনো এই সংঘাত চরমে পৌঁছায়।
রাজ্যের বহু ঘটনায় রাজ্যপাল নিয়মিত হস্তক্ষেপ করছেন—এই অভিযোগ করে আসছেন মমতা। তিনি বলেছেন, রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্বের বাইরে গিয়ে নিয়মিত রাজ্য প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছেন। যেটা রাজ্যপালের ক্ষমতার এখতিয়ারের বাইরে।
রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই সংঘাতের কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে রাজ্যপালকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সবশেষ সংঘাত দেখা দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি ফৌজদারি মামলা ঘিরে।
পুলিশ এই মামলা করলে রাজ্যপাল রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) বীরেন্দ্রর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চান। তাঁকে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন।
কিন্তু পুলিশের ডিজি রাজ্যপালের সেই নির্দেশ অমান্য করেন। রাজ্যপাল তিনটি চিঠি দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি ডিজি। এ নিয়ে চরম সংঘাত শুরু হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা এসে দাঁড়ান পুলিশের ডিজির পাশে। গতকাল শনিবার লেখেন রাজ্যপালকে ৯ পাতার এক চিঠি।
সেই চিঠিতে মমতা রাজ্যপালকে স্মরণ করিয়ে দেন, রাজ্যপালের ক্ষমতার কথা। মমতা সেই চিঠিতে রাজ্যপালকে অনেকটা হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দেন, ‘আপনি কেন্দ্রের শাসক দলের (বিজেপি) এজেন্টের মতো কাজ করছেন। কোনো রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার কাজ নয় আপনার। সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যে থাকুন আপনি।’
রাজ্যপালকে মমতা আরও লেখেন, ‘যেহেতু আপনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, তাই দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাংবিধানিক পদে থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না। কিন্তু খুবই হতাশাব্যঞ্জক যে আপনি কেন্দ্রের শাসকদলের এজেন্টের মতো কাজ করছেন। এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা বা রাজ্যে এ ধরনের এজেন্সি খুলে রাখা আমাদের রাষ্ট্র নির্মাতারা কোনো দিন দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি।’
মমতা লেখেন, রাজ্য সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। মুখ্যমন্ত্রীও নির্বাচিত জনগণের দ্বারা। আর রাজ্যপাল সম্পূর্ণ একটি মনোনীত পদ। তাই রাজ্যপালের সংবিধান ও আইন মেনে কাজ করা উচিত। প্রশাসনিক কাজে অযাচিতভাবে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
রাজ্যপাল এর অগে বলেছেন, সন্ত্রাসের নিরাপদ আশ্রয়, দুর্নীতি ও অবৈধ অস্ত্র নির্মাণের রমরমা জায়গা এই পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য পুলিশ যা করছে, তা শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে করছে। হেনস্তা হচ্ছে রাজ্যের বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষ। রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন এসব দেখেও এড়িয়ে যাচ্ছে। রাজ্যভবন (রাজ্যপালের দপ্তর ও বাসভবন) সাংবিধানিক কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার করছে না, বা ক্ষমতা খর্ব করতেও চাইছে না।
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।