ছোট বাড়ি তৈরির ধারণাটি কয়েক শতকের পুরোনো। ঐতিহ্যবাহী মঙ্গোলীয় ছোট ঘর ও রোমানীয় ওয়াগন থেকে শুরু করে আধুনিককালে শিপিং কনটেইনার দিয়ে তৈরি অনন্য নকশার ছোট থাকার জায়গাগুলো মানুষের মনে প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেয়। ছোট বাড়ির মতো ছোট হোটেল কক্ষগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি এমন ছোট ছোট হোটেলকক্ষ নিয়ে গত অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইয়াহু লাইফ। এর আলোকে ১০টি ক্ষুদ্র হোটেলকক্ষের তথ্য প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
বিশ্বের প্রথম ক্ষুদ্র হোটেল ক্যাপসুল ইন ওসাকার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। হোটেলটির কক্ষগুলো খুব ছোট। মূলত ওসাকা শহরে ব্যবসার কাজে আসা ব্যবসায়ীদের রাতে থাকার কথা মাথায় রেখে হোটেলটি তৈরি করা হয়েছিল। তবে দ্রুতই তা পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে। হোটেল কক্ষগুলোর আকার মর্গে থাকা ড্রয়ারের চেয়ে সামান্যই বড়। স্থপতি কিশো কুরোকাওয়ার নকশা করা এ হোটেল তৈরিতে জায়গা কম লাগে। হোটেলকক্ষে আছে টেলিভিশন, রেডিও, ব্যক্তিগত লাইট, আরামদায়ক বিছানা ও পরার কাপড়। চাইলে স্নানকক্ষ, লাগেজ রাখার লকার ব্যবহার, এমনকি স্পা সুবিধাও নেওয়া যাবে। তবে হোটেলটি শুধু পুরুষ অতিথিদের জন্য সংরক্ষিত।
ভ্যানকুভার আইল্যান্ডের চিরহরিৎ বনে গাছের ওপর ফ্রি স্পিরিট স্ফিয়ারসের হোটেলকক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছে। কক্ষগুলো দূর থেকে দেখতে বড় আকারের ফলের মতো। এ হোটেলের পরিচালনাধীন তিনটি ট্রি হাউজ আছে। হোটেল বুক করার সময় এসব ট্রি হাউস থেকে নিজের পছন্দেরটি বেছে নিতে হয়। এগুলোর নাম-লুনা স্ফিয়ার, মেলোডি স্ফিয়ার ও এরিন স্ফিয়ার। প্রতিটির ব্যাস মাত্র ১০ দশমিক ৫ ফুট (৩ দশমিক ২ মিটার)। পাঁচটি বৃত্তাকার জানালা দিয়ে বাইরের বনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। অর্থাৎ, এ হোটেলের সেবাগ্রহীতারা নিশ্চিতভাবে সার্বক্ষণিক প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকবেন।
ইতোশা ন্যাশনাল পার্কের প্রান্তভাগে অনগুমা নেচার রিজার্ভ সাফারি পার্কের একটি জলাধারের কাছে ড্রিম ক্রুজার হোটেলের অবস্থান। এটি বসবাসের জন্য অত্যন্ত চমৎকার এক জায়গা। সাফারি গাড়ির ওপর এ হোটেল তৈরি করা হয়েছে। নামিবিয়ার জঙ্গলে থাকার অভিজ্ঞতা নিতে চাওয়া পর্যটকদের কাছে হোটেলটি খুব পছন্দের। হোটেলের গ্রাহকদের জন্য খাবারদাবারেরও ব্যাপক আয়োজন থাকে। সূর্যাস্তকালীন পানীয় দেওয়া হয় তাঁদের। এরপর রাতে অনগুমার শেফের রান্না করা খাবার দিয়ে ভূরিভোজ করতে পারেন তাঁরা। খাওয়া-দাওয়া শেষে হোটেলে বসে চমৎকার রাত উপভোগ করা।
ড্রিম ক্রুজারের নিচের অংশে একটি স্নানঘর, শৌচাগার এবং হাত ধোয়ার বেসিন আছে। আর ওপরের অংশে একটি খাট ও লাউঞ্জ এলাকা। কাছাকাছি দূরত্বে একজন সহায়তাকারী থাকেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়লে তিনি তা এনে দেন।
সিএইচও স্টে ক্যাপসুল হোটেলের নকশা করেছে সুইডেনভিত্তিক আসবাবপত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আইকেইএ। তারা শিশুদের জন্য তৈরি করা বিশেষ খাটের আদলে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হোটেলকক্ষ তৈরি করেছে। তাইপের উপকণ্ঠে তাওইয়ুআন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত এ আধুনিক, চায়ের থিমযুক্ত ক্যাপসুল হোটেলে দুই ধরনের খাট আছে। শুধু নারী কিংবা শুধু পুরুষের জন্য নির্ধারিত দ্বিতল কক্ষগুলোতে দেওয়া হয়েছে ছোট আকারের খাট। আর নারী-পুরুষ একসঙ্গে থাকতে পারেন এমন কক্ষে রয়েছে বড় খাট। ছিমছাম প্রতিটি কক্ষে আছে একটি করে ডেস্ক/বেডসাইড টেবিল, বিনা মূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা, পোশাক ঝুলিয়ে রাখার জায়গা। বাথরুম ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়। হোটেলকক্ষে চুল শুকানোর যন্ত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখা আছে।
স্কাইলজ অ্যাডভেঞ্চার স্যুটসের মাধ্যাকর্ষণ-প্রতিরোধী স্বচ্ছ কাচের কক্ষগুলো পাহাড়ের গা ঘেঁষে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। পেরুর স্যাক্রেড ভ্যালিতে অবস্থিত এ হোটেল চালু হয়েছে ২০১৩ সালের জুনে। এটি বিশ্বের প্রথম ঝুলন্ত কোনো থাকার জায়গা। স্কাইলজ অ্যাডভেঞ্চার স্যুটসে চারটি বিছানায় আটজন পর্যন্ত ঘুমাতে পারেন। অ্যারোস্পেস অ্যালুমিনিয়াম এবং আবহাওয়া-প্রতিরোধী পলিকার্বোনেট দিয়ে তৈরি স্বচ্ছ স্যুটগুলোর প্রতিটিতে আছে নিজস্ব খাওয়ার জায়গা ও বাথরুম। স্কাইলজে রাত কাটাতে অতিথিদের অবশ্যই ১ হাজার ৩১২ ফুট উঁচুতে উঠতে হবে।
নর্দমায় পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহৃত কংক্রিটের পাইপ রঙ করে এ হোটেলের কক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছে। তাতাকোয়া মরুভূমিতে অবস্থিত তুবো হোটেল লা তাতাকোয়ায় ৩৭টি নালাকৃতির কক্ষ আছে। রং-বেরঙের পাইপগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া দিয়ে এ হোটেল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষে আছে একটি ডাবল বেড, এয়ার কন্ডিশনার ও পর্দা। এ ছাড়া হোটেলে আছে সুইমিং পুল ও বার। আছে বাগানও।
জাপানের ব্যস্ত শহর শিনজুকুতে এক টুকরো শান্ত ও নিরিবিলি জায়গা হলো বুক অ্যান্ড বেড। এটি একই সঙ্গে বইয়ের দোকান, আবার থাকার জায়গা। হোটেলের বড় বুক লাউঞ্জের তাকগুলোতে চার হাজার বই সাজানো আছে। আপনি যদি বইপোকা হয়ে থাকেন, তবে আরামে সেখানে দিন কাটিয়ে দিতে পারবেন। বইয়ের তাকগুলোর মাঝে খাট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকগুলো এখানে দেয়াল হিসেবে কাজ করছে। হোটেলে মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষিতভাবে রাখার জায়গা আছে। এ ছাড়া সেখানে বিনা মূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা দেওয়া হয়। আশপাশের শব্দ থেকে বাঁচতে কানে ইয়ারপ্লাগ পরতে চাইলে তা–ও দেওয়া হয়। চাইলে হোটেল থেকেই ভাড়া করা যাবে রাতে পরার পোশাক।
ভ্রমণকারীদের জন্য ইস্ট জিয়ন রিসোর্ট অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। অদ্ভুত আকারের থাকার জায়গা আছে এমন হোটেলগুলোর মধ্যে এ রিসোর্টের ‘মিরর হাউসেস’ উল্লেখযোগ্য। হোটেলটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে, ভ্রমণকারী সেখানে থেকে দর্শনীয় পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা পান। ২০২৪ সালের এপ্রিলে এ হোটেলের যাত্রা শুরু। এখানে আছে বড় বিছানা, স্নানাগার ও রান্নাঘরের সুবিধা। হোটেলকক্ষের সামনে কিছু খোলা জায়গা আছে। সেখানে দিব্যি বারবিকিউ গ্রিল করতে পারেন ভ্রমণকারীরা। আবার পাহাড় থেকে নিচের দিকে ঘুরতে গেলে সেখানে আছে সুইমিংপুল ও গরম টাবে গোসল সেরে নেওয়ার সুবিধা।
সুইডেনের পশ্চিমে অবস্থিত দ্য সেভেনটি টু আওয়ার কেবিনস আদতে স্বচ্ছ কাচের কক্ষ। ২০১৭ সালে এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে গিয়ে এ হোটেলকক্ষ গড়ে তোলা হয়। গবেষণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গার পাঁচ ব্যক্তিকে তিন দিন ওই কক্ষে রাখা হয়েছিল। সুইডেনের বুনো পরিবেশে প্রকৃতির সংস্পর্শে তাঁরা কেমন থাকেন, তা দেখা হয়েছিল। ৭২ ঘণ্টা পর দেখা যায়, তাঁদের রক্তচাপ ও মানসিক চাপ কমে গেছে এবং কার্যক্ষমতা ও সৃজনশীলতা বেড়েছে। এখন আর এটি গবেষণার কাজে ব্যবহার হচ্ছে না। চাইলে যেকোনো ভ্রমণকারী বুকিং দিয়ে তিন দিন হ্রদের পাশে স্থাপিত এ হোটেলকক্ষে কাটিয়ে আসতে পারেন।
পোর্ট ফিলিপ বে-এর তীর ঘেঁষে এ হোটেল তৈরি করা হয়েছে। নির্জনে সময় কাটানোর জন্য এটি একটি উপযুক্ত জায়গা। হোটেলের প্রতিটি কক্ষে আছে একটি করে কুইন–সাইজ বিছানা। কক্ষের সঙ্গে আছে স্নানাগার ও রান্নার ব্যবস্থা। কক্ষের দোরগোড়ায় থাকা ব্যক্তিগত বারান্দাটিতে যেন অনায়াসেই একটি উষ্ণ সন্ধ্যা কাটিয়ে দেওয়া যায়। কক্ষ থেকে মাত্র কয়েক ধাপ দূরেই সাগরের বালুময় তীরের অবস্থান।