বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
সমালোচনা পেছনে ফেলে নোবেল জয়ের পথে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছরের ১১ মার্চ করোনা সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণার এক বছরে নানা আলোচনা–সমালোচনা নিয়ে এগিয়ে গেছে বৈশ্বিক এ সংস্থাটি। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) সংক্রমণকে ২০২০ সালের ১১ মার্চ বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় সংস্থাটিকে। কিন্তু এক বছরেই অবস্থা পাল্টে গেছে। এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে তারা। এত অল্প সময়ে সমালোচনার ঝড় সামলে এ বছর নোবেল পুরস্কার জয় করে নেওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটির। খবর এএফপির।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে দেশটির বিভিন্ন শহর ও পরে অন্যান্য দেশেও তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সংক্রমণ শুরুর একেবারে গোড়া থেকে এ সংকট মোকাবিলা করা নিয়ে অল্পবিস্তর সমালোচনার মুখে পড়ে ডব্লিউএইচও।
কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেন, করোনাভাইরাস সহজেই একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হয়, এই বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিতে অনেক দেরি করে ফেলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে প্রাথমিকভাবে সংস্থাটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কেন্দ্রে ছিল করোনার সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা, বিশেষত মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিতে তার অস্বীকৃতির বিষয়টি।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ডব্লিউএইচও উহানে রহস্যজনক এক নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকার খবর জানতে পারে। সংস্থাটি বলেছে, এর পরপরই তারা এ নিয়ে কাজে নেমে পড়ে। তবে এক মাস পর ২০২০ সালের ৩০ জুন সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস সংক্রমণ পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্যগত বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেন। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী, এটিই স্বাস্থ্য খাতের সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা।
অবস্থা গুরুতর হতে থাকলে একই বছরের ১১ মার্চ তেদরোস আধানোম করোনার সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
প্রাথমিকভাবে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করলেও ক্রমেই কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও তা জোরদার করতে থাকে ডব্লিউএইচও। ব্যাপক যোগাযোগ তৎপরতায় সমালোচনাকে পেছনে ফেলে প্রশংসা কুড়ানো শুরু করে তারা। সংস্থার পক্ষ থেকে তেদরোস নিয়মিতভাবে সংবাদ ব্রিফিং ও বিশ্ববাসীর জন্য জরুরি পরামর্শ দিতে থাকেন।
করোনা সংকটের শুরুতে স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীনের প্রাথমিক সাড়ার ভূয়সী প্রশংসা করে। এ নিয়েও সমালোচনায় পড়ে সংস্থাটি। চীনের প্রশংসা করলেও করোনার উৎস শনাক্তে তদন্তকাজ চালাতে দেশটিতে এক বছরেও অনুমতি পায়নি তারা। অভিযোগ ওঠে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনকে দেশটির মিশন হাসিলে করোনার সংকটকে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো বলেই বসেন, ডব্লিউএইচও বেইজিংয়ের ‘পুতুল’। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার বিষয়টিকে চেপে গিয়ে সংস্থাটি এ ভাইরাসকে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করে তাঁর প্রশাসন ও অন্যরা। সংস্থাটির বৃহত্তম অনুদানদাতা যুক্তরাষ্ট্রকে সংস্থা থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণাও দেন ট্রাম্প।
অবশ্য জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ডব্লিউএইচওর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পাল্টে গেছে।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে মাস্কের ব্যবহার নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ও পরে মাস্কের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসা প্রশ্নেও বিতর্কে জড়ায় স্বাস্থ্য সংস্থা। বিভিন্ন দেশের মধ্যে সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক আকাশপথ বন্ধের আহ্বান না জানিয়েও সমালোচিত হয় এই সংস্থা।
প্রাথমিকভাবে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করলেও ক্রমেই কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও তা জোরদার করতে থাকে ডব্লিউএইচও। ব্যাপক যোগাযোগ তৎপরতায় সমালোচনাকে পেছনে ফেলে প্রশংসা কুড়ানো শুরু করে তারা। সংস্থার পক্ষ থেকে তেদরোস নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিং ও বিশ্ববাসীর জন্য জরুরি পরামর্শ দিতে থাকেন। টানা এক বছরের বেশি সময় প্রায় প্রতিদিনই চলে এই ব্রিফিং। পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং এই মহামারি নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বাধীন তদন্তকাজ শুরু করে সংস্থা।
বিশেষত, দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা নিয়ন্ত্রণে নানা সহায়তা প্রদান, প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ, পরীক্ষা ইত্যাদি কার্যক্রম চালিয়ে অব্যাহতভাবে প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছে ডব্লিউএইচও। বিশ্ববাসী সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে এ সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচি। এ কর্মসূচির অধীন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলতি বছর ২০০ কোটি মানুষের কাছে করোনার টিকা পৌঁছে দেবে সংস্থাটি।
স্বাভাবিকভাবেই এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তি ও সংগঠনের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা।