রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়েছে লড়াই

রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছে। দৌড়ে অবস্থান নিচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা। শনিবার দনবাসের লিসিচানস্ক শহরে।
ছবি : এএফপি

ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। সেখানে রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তাঁর দেশের বাহিনী রাশিয়ার আক্রমণ থামাতে সবকিছুই করছে। গত শুক্রবার কিয়েভের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার বাহিনীকে পিছু হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ইউক্রেন। রুশনিয়ন্ত্রিত খেরসন অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার বাহিনীর হাতে খেরসন শহরটির প্রথম পতন ঘটেছিল।

পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলে ভয়াবহ লড়াই অব্যাহত রয়েছে। ওই অঞ্চলে, বিশেষ করে শিল্পনগরী সেভেরোদোনেৎস্কের আশপাশে মস্কো আরও সেনা ও সরঞ্জাম জড়ো করেছে।

মাইকোলাইভ অঞ্চলের মেয়র ভিটালি কিম বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সামরিক সহায়তার প্রয়োজন।

জেলেনস্কি বলেছেন, পূর্ব দনবাস অঞ্চলে, বিশেষ করে সেভেরোদোনেৎস্ক অঞ্চলে খুব কঠিন লড়াই অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাঁর দেশের যুদ্ধের ফলাফল কেবল ইউক্রেন নয়, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করবে। তাই রাশিয়ার হামলা ঠেকানোকে পুরো বিশ্ববাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

দক্ষিণে মাইকোলাইভ অঞ্চলের মেয়র ভিটালি কিম বলেছেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সামরিক সহায়তার প্রয়োজন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী শক্তিশালী, তাদের কাছে প্রচুর কামান ও গোলাবারুদ রয়েছে। আপাতত এই যুদ্ধে আমাদের কাছে গোলাবারুদ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের ময়দানে যা ঘটছে, তা থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরিয়ে নিলে চলবে না।

রুশ সেনাদের ছোড়া রকেট বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে লিসিচানস্ক শহরের রাস্তার পাশে।
ছবি : রয়টার্স

সেভেরোদোনেৎস্কের কাছে নদীর অপর পারেই লিসিচানস্ক শহর। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, তাঁদের সামনে কঠিন বিকল্প—সেখানে অবস্থান করে সাহসের সঙ্গে গোলাবর্ষণ মোকাবিলা করা অথবা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী শক্তিশালী, তাদের কাছে প্রচুর কামান ও গোলাবারুদ রয়েছে। আপাতত এই যুদ্ধে আমাদের কাছে গোলাবারুদ নেই।
ভিটালি কিম, মাইকোলাইভ অঞ্চলের মেয়র

ইয়েভেন ঝিরিয়াদা (৩৯) বলেন, ‘শহরের একমাত্র পানি বিতরণকেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া পানি পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। গোলা ও গুলিবর্ষণের মধ্যেই আমাদের সেখানে যেতে হয়। এভাবেই আমরা বেঁচে আছি।’

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, রাশিয়া আরও এক বছর বর্তমান গতিতে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। যুদ্ধের সম্মুখভাগে অস্ত্রশস্ত্রে কিয়েভ উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছে বলেও সতর্ক করেছে তারা। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান গোয়েন্দা অধিদপ্তর সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পশ্চিমাদের আস্থা অর্জনে ক্রেমলিনের নেতৃত্ব সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধ স্থগিত রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু পরে আবার আগ্রাসন চালিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপপ্রধান ভাদিম স্কিবিৎস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ১০ থেকে ১৫টি কামানের বিপরীতে ইউক্রেনের ১টি কামান আছে। তাই এখন পশ্চিমা মিত্ররা আমাদের কী অস্ত্র সরবরাহ করছে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’

কিয়েভের দেওয়া সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, রাশিয়ার হামলার পর থেকে যুদ্ধে ইউক্রেনের ১০ হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, মারিউপোল শহরে কলেরা দেখা দিয়েছে। পানিদূষণ থেকে এটি মহামারি আকার ধারণ করছে।

ফ্রান্সের প্রস্তাব

বিশ্ব এখনো ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলাচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর ওডেসায় নিরাপদে প্রবেশের কাজে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে ফ্রান্স। বন্দরে রাশিয়ার নৌবাহিনীর প্রবেশ ঠেকাতে সমুদ্রে মাইন পেতে রেখেছে ইউক্রেন। জবাবে বন্দরটি কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়া। বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্যসংকটের আশঙ্কার মধ্যেই রপ্তানির অপেক্ষায় এই বন্দরে খাদ্যশস্য পড়ে আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে রাজি করাতে আমরা প্রস্তাব দিতে যাচ্ছি, যাতে সম্পূর্ণ নিরাপদে ওডেসা বন্দরে প্রবেশ করা যায়। অন্যভাবে বলতে গেলে, সমুদ্রে মাইন পেতে রাখা সত্ত্বেও জাহাজগুলো যাতে বন্দরে যাতায়াত করতে পারে।’ উপদেষ্টা আরও বলেন, ফ্রান্স ইউক্রেনের জন্য বিজয় চায়। অবশ্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সম্প্রতি রাশিয়াকে অপমানিত না করার পরামর্শ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার বলেন, জেলেনস্কিকে দেওয়া সতর্কতাগুলো তিনিসহ অনেকেই শুনতে চাননি।

রাশিয়ার হুমকি

এদিকে পোল্যান্ডে ন্যাটো বাহিনী গঠনের প্রচেষ্টার একই ধরনের জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে বলে ইন্টারফ্যাক্সের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে। ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক দেখভালের দায়িত্বে থাকা রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের প্রধান ওলেগ তিয়াপকিন বলেন, রুশ ফেডারেশনের প্রতি সম্ভাব্য হুমকি দূর করতে সব সময় যথোপযুক্ত ও সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন