রাশিয়ার শত্রুদের ‘দাঁত ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি পুতিনের
রাশিয়ার শত্রুদের ‘দাঁত ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার এক সরকারি বৈঠকে পুতিন এই মন্তব্য করেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে গভীর সংকটের মধ্যে পুতিন এমন মন্তব্য করলেন। পুতিন বলেছেন, যে বা যারা তাঁর দেশ আক্রমণ করবে কিংবা বিশাল ভূখণ্ডে নজর দেবে, তাদের দাঁত ভেঙে দেবে রাশিয়া।
পুতিন আরও বলেন, প্রতিবার রুশ জাতি যখনই শক্তিশালী হয়ে ওঠে, শত্রুরা রাশিয়ার ডানা ছেঁটে দিতে চায়।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রত্যেকে আমাদের কোথাও-না কোথাও কামড় বসাতে চায়। কিংবা কামড় বসিয়ে আমাদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু যারা এসব করতে চায়, তাদের জানা উচিত যে আমরা তাদের দাঁত ভেঙে দেব, যাতে তারা কামড় দিতে না পারে।’
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও যে ভূখণ্ডের দিক দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশে, সে কথা মনে করিয়ে দেন পুতিন। তিনি বলেছেন, দেশকে রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ জরুরি।
কে বা কারা রাশিয়ার শত্রু, তার নাম অবশ্য উল্লেখ করেননি পুতিন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা চলছে।
পুতিন যেদিন শত্রুদের দাঁত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, ঠিক তার আগের দিন বুধবার আইসল্যান্ডে আর্কটিক কাউন্সিল সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেন। আলোচনায় উভয় পক্ষই সম্পর্কোন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়।
৬৮ বছর বয়সী পুতিন দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় আছেন। ২০০০ সালে পুতিন প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন তিনি চার বছর করে মোট দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তখন তাঁর টানা তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা সম্ভব ছিল না। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। আর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভ। সমালোচকদের মতে, মেদভেদেভ ছিলেন ‘পুতুল’ প্রেসিডেন্ট।
মেদভেদেভ রুশ প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করেন। রুশ প্রেসিডেন্টের ছয় বছরের এই মেয়াদকাল ২০১২ সাল থেকে কার্যকর হয়। ২০১২ সালে পুতিন ফের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। ২০১৮ সালে তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এই দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর টানা দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে।
ছয় বছর করে আরও দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সুযোগ রেখে করা আইনে সম্প্রতি চূড়ান্ত অনুমোদন দেন পুতিন। ফলে তিনি আরও দুই মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারবেন। অর্থাৎ পুতিন নিজের জন্য ২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করেছেন। সমালোচকেরা বলছেন, পুতিন আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার জন্য এই কৌশল নিয়েছেন।