রাজপরিবারের অজানা-অপ্রিয় তথ্য দিলেন মেগান
ব্রিটিশ রাজপরিবারের জৌলুশপূর্ণ জীবনে থেকেও ভালো ছিলেন না প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ও সাবেক মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। ডাচেস অব সাসেক্স বলেছেন, পরিবারের মধ্য থেকেও তিনি এত বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিলেন যে একটা সময় বেঁচে থাকার ইচ্ছাই হারিয়ে ফেলেন। ভাবছিলেন আত্মহত্যা করবেন। খবর বিবিসি, সিএনএন ও সিবিএস নিউজের।
জনপ্রিয় মার্কিন উপস্থাপক অপরাহ্ উইনফ্রেকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে কয়েক শ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পর্কে অনেক অজানা ও অপ্রিয় কথা বলেছেন হ্যারি ও মেগান দম্পতি। ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে সিবিএস টিভিতে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়। ‘অপরাহ্ উইথ মেগান অ্যান্ড হ্যারি: এ সিবিএস প্রাইমটাইম স্পেশাল’ শিরোনামের বিশেষ টিভি শোটি যুক্তরাজ্যের আইটিভিতেও স্থানীয় সময় আজ সোমবার রাতে প্রচার করা হবে।
রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর থেকে এ পর্যন্ত এটিই মেগানের দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে হ্যারিও প্রাসাদ জীবনে নিজের অনেক অপ্রিয় অভিজ্ঞতা–অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেছেন।
উইনফ্রের এক প্রশ্নের জবাবে মেগান বলেন, বাকিংহাম প্যালেসের একজন শিকারে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে আর্চির গায়ের রং কত কালো হতে পারে, সে অনুমান করা থেকে শুরু করে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কতবার মধ্যাহ্নভোজে গেছেন—সবকিছুতে নাক গলাত প্যালেস।
মেগান বলেন, যখন আর্চি গর্ভে ছিল, তখন তাঁকে জানানো হয়, তাঁর সন্তানকে প্রিন্স বা সিকিউরিটি উপাধিতে ভূষিত করা হবে না; যদিও এটি ছিল প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম।
এটি তাঁকে মর্মাহত করেছিল। তাঁরা আশা করছিলেন তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান হবে মেয়ে।
উইনফ্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজপরিবারে কাটানো জীবনের নানা জটিলতার কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্না আটকাতে চেষ্টা করেন মেগান। বলেন, বেঁচে থাকার ইচ্ছেই চলে গিয়েছিল। জীবন অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে অনুভূতিগুলো ভাগ করে নিতে পারছিলেন না।
মেগান বলেন, ‘ওই সময় কথাগুলো প্রকাশ করতে আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে হ্যারিকে বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। কেননা, আমি জানতাম, সে নিজেই এই পরিবারে কতটা ভুক্তভোগী। তবে এ–ও জানতাম, আমি যদি না বলি, তবে তা (আত্মহত্যা) করেই ফেলব...আসলে আমি আর বেঁচে থাকতে চাইছিলাম না’—বলেন মেগান।
মেগান বলেন, রাজপরিবারে থাকাকালীন তাঁর মনে হয়েছিল, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ও শতাব্দী প্রাচীন বাকিংহাম প্যালেসের চক্রান্তের শিকার তিনি। রাজপরিবারের সদস্যদের ভালো–মন্দ দেখার চেয়ে তাঁকে (মেগান) কেমনভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে, সেটি নিয়েই বেশি আলোচনা চলছিল।
হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবারে কীভাবে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে আরও কিছু অভিযোগ করেন মেগান মার্কেল। যেমন: তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খুব বেশি নজরে পড়ায় একপর্যায়ে বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর মধ্যাহ্নভোজে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ‘অবস্থা এমন যে আমি সবখানে আছি, কিন্তু আমি কোথাও নেই’—বলেন তিনি।
রাজপ্রাসাদে থাকা নিজের জন্য অসহনীয় বোঝা হয়ে উঠলে মেগান বাকিংহাম প্যালেসের মানবসম্পদ বিভাগের সহায়তা চান। এ সময় তাঁকে বলা হয়, তিনি প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী নন। তাই তাঁকে অন্য কোথাও সহায়তা চাইতে হবে।
ডাচেস অব সাসেক্স বলেন, হ্যারিকে বিয়ে করার পর রাজপরিবার নিজে থেকেই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু বাকিংহাম প্যালেসকে যাঁরা চালান, তাঁদের থেকে পরিবারটির সদস্যরা ছিলেন আলাদা রকমের। তবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সব সময়ই ছিলেন একজন চমৎকার, আন্তরিক ও শুভাকাঙ্ক্ষী মনের মানুষ।
প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী ডাচেস অব কেমব্রিজ কেটের সঙ্গে নিজের বিরোধ নিয়ে প্রচলিত গুজব সম্পর্কেও কথা বলেন মেগান। বলেন, পোশাক নিয়ে কেটকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি—এমন খবর সঠিক নয়। বরং সত্য হলো, তিনি (মেগান) নিজেই কেঁদেছিলেন।
হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেন, মেগান মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রাজপরিবার থেকে কোনো সাহায্য পায়নি। এ নিয়ে কথাও হতো না।
হ্যারি আরও বলেন, মেগানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই তাঁকে বাঁচিয়েছে। এ সময় মেগান তাঁর কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বরং হ্যারির সিদ্ধান্তই গোটা পরিবারকে টিকিয়েছে।’ তখন হ্যারি বলেন, ‘আমাদের যা করা উচিত ছিল, আমরা সেটিই করেছি।’
রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিষয়ে হ্যারি বলেন, তিনি সব সময় তাঁর বাবা প্রিন্স চার্লসকে ভালোবাসবেন। কিন্তু তাঁর আচরণ তাঁকে ‘হতাশ’ করেছে। ভাই প্রিন্স উইলিয়াম সম্পর্কে হ্যারি বলেন, তিনি তাঁকেও ভালোবাসেন; তবে তাঁদের দুজনের পথচলা ভিন্ন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁকে ভালোবাসি, আগেও যেমনটা বলেছি। তিনি আমার ভাই এবং আমরা একসঙ্গে একই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা একই। তবে আমরা আলাদা পথে আছি।’
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে হ্যারি ও মেগান দুজনই বলেন, যদি প্যালেসের সবার সমর্থন পেতেন, তবে রাজপরিবারের সদস্য হয়েই তাঁরা থেকে যেতে পারতেন।
হ্যারি অপরাহ্কে জানান, মেগান ও রাজপরিবারের মধ্যে সম্পর্কের মোড় পাল্টে যায় অস্ট্রেলিয়ায় তাঁদের সফরে যাওয়ার পর। সেখানে সাধারণ মানুষ ও কমনওয়েলথের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেগান যেভাবে নির্দ্বিধায় মিশে যান, তাতে রাজপরিবারের সদস্যরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে মেগানের মধ্যে মা প্রিন্সেস ডায়ানার পরিণতিই দেখতে পাচ্ছিলেন বলে জানান হ্যারি।
এক বছর আগে হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে তাঁদের নেওয়া এ সিদ্ধান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয় রাজপরিবারে। ওই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছিলেন বিশ্ববাসী। এই দম্পতি জানিয়েছিলেন, তাঁরা স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে চান।
সম্প্রতি হ্যারি ও মেগান জানিয়ে দেন, তাঁরা আর কখনো রাজদায়িত্বে ফিরছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও ডিউক অব সাসেক্স ও ডাচেস অব সাসেক্সকে তাঁদের রাজকীয় উপাধি এবং রাজপরিবার থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার পর গত বছর হ্যারি ও মেগান যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। এরপর থেকে এক নতুন জীবন শুরু করেছেন এই দম্পতি।