ইউক্রেন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতিতে রুশপন্থীরা

সরকারি সেনা ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত একটি কিন্ডারগার্টেন ভবন। ইউক্রেনের লুশাঙ্কস অঞ্চলে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক উত্তেজনা চলছে, অন্যদিকে পূর্ব সীমান্তে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সরকারি সেনাদের টানা দুই দিন চলছে গোলাগুলি। এর মধ্যেই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চলমান সংকট নাটকীয় মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। খবর বিবিসি ও আল–জাজিরার
পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর)।

এখানকার অধিকাংশ মানুষ রুশ ভাষায় কথা বলে। ইতিমধ্যে সেখানকার অনেক মানুষকে রাশিয়ার নাগরিকত্বও দেওয়া হয়েছে। দোনেৎস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা দেনিশ পুশিলিন আজ শনিবার এক ভিডিও বার্তায় জানান, ইউক্রেনের সরকারি সেনারা তাঁদের যোদ্ধাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা কয়েকটি হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছেন।

যুদ্ধ করতে সক্ষম, এমন বয়সী পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুশাঙ্কস অঞ্চলের সব নাগরিককে প্রস্তুত থাকার ডিক্রি জারি করেছেন দেনিশ পুশিলিন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি যুদ্ধপ্রস্তুতির ডিক্রি জারি করেছি। এ অঞ্চলের রুশ নাগরিকদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’

দোনেৎস্ক ও লুশাঙ্কস এলাকায় প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বসবাস। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর এ অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাত লাখের বেশি বাসিন্দা রাশিয়ার নাগরিকত্ব নেন।

লুশাঙ্কসের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লিওনিদ পাশেচনিক যুদ্ধ করতে সক্ষম ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী স্থানীয় ব্যক্তিদের এলাকা ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। তাঁদের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধপ্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের প্রয়োজনে যেকোনো সময় নাগরিকদের যানবাহন ও সম্পদ অধিগ্রহণ করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সাত লাখ মানুষকে রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ বিষয়ে স্থানীয় একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে জানান, ‘অনেকেই ইতিমধ্যে এলাকা ছেড়েছে। স্থানীয় লোকজনের চাওয়া একটাই, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ এলাকার দায়িত্ব যে কেউ নিক। হোক সেটা রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন।’

এদিকে আজ আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে টানা দুই দিন সরকারি সেনা ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় আজ সকালে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াইয়ে একজন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনে সেনা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াইয়ে এটাই প্রথম হতাহতের ঘটনা। তবে এ বিষয়ে ইউক্রেন সরকার বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

আরও পড়ুন

ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মস্কোর উত্তেজনার মধ্যেই সামরিক মহড়া পর্যবেক্ষণ করবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ এ মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাশিয়ার এই সামরিক মহড়ায় অংশ নেবে পারমাণবিক অস্ত্র চালাতে সক্ষম বাহিনী। মহড়ায় ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।

চলমান উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, ‘পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তা হতে পারে।’ যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আগ্রাসন চালাতে দোনেৎস্ক ও লুশাঙ্কসে রুশ সেনা, বিচ্ছিন্নতাবাদীসহ ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার যোদ্ধা প্রস্তুত রেখেছেন পুতিন। তবে রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন

তবে এমন সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও বন্ধ নেই সংকট সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এখন জার্মানির মিউনিখ সফরে রয়েছেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।

আরও পড়ুন