পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কারণে নাম আসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। তবে ‘কোনো ধরনের দুর্নীতির’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিরোধীরা রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এ কারণে এই কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে। খবর বিবিসি অনলাইনের।
পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার এক কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয় গত সোমবার। এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। পুতিন ছাড়া বিভিন্ন দেশের বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধানদের নাম পাওয়া যায় এসব নথিতে। নথি ফাঁসের পর এ বিষয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন পুতিন।
একটি টেলিভিশনে সরাসরি বক্তৃতায় পুতিন অভিযোগ করেন, ‘পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীরা রাশিয়ার একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ দেখে খুবই উদ্বিগ্ন। তাই তারা চেষ্টা করছে আমাদের আঘাত করে তাদের অনুগত করে রাখতে। তারা এটা করেছে, কারণ পানামা পেপারসে আমার নাম ছিল না। তারা আমার পরিচিত ও কয়েকজন বন্ধুকে খুঁজে বের করেছে। তারপর সেখান থেকে কিছু তথ্য বাদ দিয়ে কিছু তথ্য জড়ো করেছে।’
পানামা পেপারসের নথিতে পুতিনের দীর্ঘদিনের বন্ধু সের্গেই রোলদুগিন নাম রয়েছে। রোলদুগিন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিজ ও সনেট ওভারসিজ নামের দুটি অফশোর কোম্পানির মালিক। পানামা পেপারসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দুটি প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিজ ২০০৭ সালে ছয় মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পর কোম্পানিটি উল্লেখ করে তারা মাত্র এক মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে রোলদুগিন এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
রোলদুগিনের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের ব্যাপারে পুতিন তাঁর বক্তৃতায় কিছু না বললেও বন্ধুর প্রশংসা করে বলেছেন, ‘রোলদুগিন তাঁর অর্জিত প্রায় সব অর্থ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন।’
মোসাক ফনসেকার নথিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিকটাত্মীয়দের নাম আসে। এ তালিকায় আরও আছে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান আল সৌদি, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের এক ছেলে এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই ছেলে ও এক মেয়ের নাম।
রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের পাশাপাশি ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি, ভারতের চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতিমান অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর পুত্রবধূ অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়ার রাইয়ের নামও আছে ওই নথিতে।
মোসাক ফনসেকার ওই এক কোটি ১৫ লাখ নথি অজানা সূত্র থেকে জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতং-এর হাতে আসে। পত্রিকাটি সেসব নথি ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দেয়। ১৯৭৭ থেকে ২০১৫, প্রায় ৪০ বছরের এসব নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার কিছু অংশ আইসিআইজে প্রকাশ করে।
ওই কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর গত মঙ্গলবার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমন্ডুর ডেভিড গুনলাগসন।