২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মাতৃগর্ভেই বায়ুদূষণের শিকার

প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলে অতিক্ষুদ্র কার্বন কণার অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকেরা। নতুন এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ভ্রূণের বেড়ে ওঠায় গর্ভফুলের যে অংশ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ করা হয়, সেখানে অতিক্ষুদ্র কার্বন কণার অস্তিত্ব প্রথমবারের মতো গবেষকেরা পেয়েছেন। গবেষণাপত্রটি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনস–এ প্রকাশিত হয়েছে।

প্লাসেন্টা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা গর্ভের সন্তানকে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ এবং শিশুর রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

অ্যালকোহল, নিকোটিন ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য গর্ভফুল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম, যে কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে এসব থেকে দূরে থাকতে বলা হতো। এখন দেখা যাচ্ছে, এই অতিক্ষুদ্র কার্বন কণাও গর্ভফুলে যেতে সক্ষম। এই অতিক্ষুদ্র কার্বন কণা অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ফুসফুস থেকে গর্ভস্থ ভ্রূণে গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

বায়ুদূষণের কারণে গর্ভপাত, সময়ের আগেই শিশুর জন্মগ্রহণ এবং জন্মের সময়ে শিশুর কম ওজনে থাকার ঝুঁকি বাড়ছে, এমন একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞদের মত হলো, ভ্রূণের ক্ষতির প্রভাব জীবনভর থেকে যায়। যার কারণে গর্ভস্থ শিশুর ঝুঁকি এড়াতে চাইলে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দূষণময় ব্যস্ত সড়ক এড়াতে হবে।

গবেষণাকর্মটির প্রধান গবেষক, বেলজিয়ামের হ্যাসেলত ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টিম নহরত বলেন, ‘এটি (ভ্রূণ) জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তখন তৈরি ও বড় হতে থাকে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্যই অন্তঃসত্ত্বা নারীর বায়ুদূষণযুক্ত এলাকায় বের হওয়া কমানো প্রয়োজন।’ এই গবেষক আরও বলেন, বায়ুদূষণ কমানোর বিষয়টি যেকোনো দেশের সরকারের ওপরই বর্তায়, তবে সম্ভব হলে, ব্যস্ত সড়ক লোকজনের এড়ানো উচিত।

গবেষকেরা বেলজিয়ামের হ্যাসেলত শহরের অধূমপায়ী ২০ জনের বেশি নারীর গর্ভফুল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ওই শহরটির ক্ষুদ্র কণার দূষণের মাত্রা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশ কম, যদিও তা ডব্লিউএইচওর সীমারেখার চেয়ে বেশি। অতিক্ষুদ্র কালো কার্বন কণা শনাক্ত করতে গবেষকেরা লেজার প্রযুক্তির ব্যবহার করেন। তাঁরা প্রতিটি প্লাসেন্টাতেই অতিক্ষুদ্র কার্বন কণা পেয়েছেন এবং দেখেন যে ক্ষুদ্র কার্বন কণার সংখ্যার সঙ্গে গর্ভস্থ শিশুটির মা যতটা দূষণে ছিলেন, তার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। শহরটির মূল সড়কের কাছে যেসব অন্তঃসত্ত্বা নারী ছিলেন, তাঁদের গর্ভফুলের প্রতি ঘনমিলিমিটারে গড়ে ২০ হাজার কার্বন কণা ছিল। আর যে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা মূল সড়ক থেকে দূরে ছিলেন, তাঁদের গর্ভফুলের প্রতি ঘনমিলিমিটারে গড়ে ১০ হাজার কার্বন কণা ছিল।

লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও শিশুর ওপর বায়ুদূষণের প্রভাববিষয়ক বিশেষজ্ঞ জোনাথন গ্রিগ বলেন, যেখানে বায়ু দূষিত, সেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারীর বের হওয়ার কারণে গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটছে, আর এ গবেষণাই এর পক্ষে জোরালো প্রমাণ দিচ্ছে।

গর্ভফুলে কার্বন কণার সম্ভাব্য উপস্থিতির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে প্রথম উপস্থাপন করা হয়েছিল।

নতুন প্রকাশিত ওই নিবন্ধে গবেষকেরা এও বলেন যে অতিক্ষুদ্র কার্বন কণা প্লাসেন্টা থেকে ভ্রূণে যেতে পারে কি না, তা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।