মহামারি-যুদ্ধের মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি ব্যবসায়ীদের রমরমা

করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে বেড়েছে পণ্যের দাম। এ সুযোগে ফুলেফেঁপে উঠেছেন খাদ্য ও জ্বালানি ব্যবসায়ীরা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। এ সুযোগে ফুলেফেঁপে উঠেছেন খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি ব্যবসায়ীরা। গত দুই বছরে এই দুই খাতের ব্যবসায়ীদের সম্পদ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৩০০ কোটি (৪৫৩ বিলিয়ন) ডলার। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এ তথ্য জানিয়েছে।

আজ সোমবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল রোববার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। এ সম্মেলনে অংশ নিতে বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শতকোটিপতি এবং বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) দাভোসে জড়ো হচ্ছেন।

এমন সময়ে অক্সফাম খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি ব্যবসায়ীদের সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মাসে খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে বিশ্বে নতুন করে ৬২ জন শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। এ ছাড়া করোনাকালে বিশ্বে নতুন করে ৫৭৩ জন ব্যক্তি বিলিয়নিয়ার হয়েছেন।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খাদ্য ব্যবসায়ীদের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটাভিত্তিক কারগিল ইনকরপোরেশন। উইলিয়াম ওয়ালস কারগিলের হাত ধরে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পরিবারকেন্দ্রিক। অক্সফাম বলছে, করোনা মহামারির আগে এ পরিবারে আটজন বিলিয়নিয়ার ছিলেন। এখন সেখান থেকে বেড়ে ১২ জন হয়েছেন। কারগিল পরিবারসহ চারটি কোম্পানি বিশ্বের কৃষিপণ্যের বাজারের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

আরও পড়ুন

অক্সফাম বলছে, খাবারের দাম গত বছরে গড়ে ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর জেরে মহামারির আগের সময়ের তুলনায় বিশ্বের আরও ২৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জনসংখ্যা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের মোট জনসংখ্যার সমান। আর চলতি বছরের মধ্যেই ৮৬ কোটি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাপনের ব্যয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের নিচে চলে যেতে পারে।

এ বিষয়ে অক্সফাম জিবির (গ্রেট ব্রিটেন) প্রধান নির্বাহী ড্যানি স্রিস্কানদারাজাহ বলেন, ‘একদিকে পূর্ব আফ্রিকার মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে, অপর দিকে খাবার ও জ্বালানির আকাশছোঁয়া দামের কারণে বিশ্বের অতিধনীদের ভাগ্য ফুলেফেঁপে উঠছে, এটা নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না।’

গত ২০ বছরে চরম দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে অক্সফাম। এ পরিস্থিতিতে লাগাম টানতে ধনকুবেরদের সম্পদের ওপর কর আরোপ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।

কোটিপতিদের সম্পদের ওপর বার্ষিক ২ শতাংশ ও শতকোটিপতিদের সম্পদের ওপর বার্ষিক ৫ শতাংশ করারোপ করা হলে এক বছরে ২ দশমিক ৫২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সংগ্রহ করা যাবে বলে জানায় অক্সফাম।

ধনীদের কাছ থেকে এই কর আদায় করা গেলে তা দিয়ে বিশ্বের ২৩০ কোটি মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ, পর্যাপ্ত টিকা তৈরি ও দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা সম্ভব বলে জানিয়েছে অক্সফাম।