‘বিশ্বসেরা স্নাইপার’ কেন ইউক্রেন ছাড়লেন
কানাডার একজন স্নাইপারকে নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো একসময় উচ্চকিত ছিল। ওয়ালি নামে পরিচিত ওই যোদ্ধাকে ‘বিশ্বসেরা স্নাইপার’ বলা হচ্ছিল। স্বেচ্ছায় ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়া ওয়ালি সম্প্রতি কানাডার কুইবেকে ফিরে গেছেন। দেশে ফিরেই স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ওয়ালি বলেন, তিনি চরম হতাশ। তাঁর দাবি, ইউক্রেনে সেনাদের পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই। প্রশিক্ষণ দুর্বল। সেনাদের কেউ পালাচ্ছেন তো কেউ যুদ্ধের ফায়দা নিচ্ছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার হামলার মুখে স্বেচ্ছায় ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধ করতে তখন বিদেশিদের আহ্বান জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে গত মার্চে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে যান ওয়ালি। তখন পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো তাঁকে নিয়ে ব্যাপক প্রচারও চালিয়েছিল।
এর আগে ইরাকে কুর্দি মিলিশিয়াদের হয়ে লড়াই করা ওয়ালিকে ‘বিশ্বের সেরা’ স্নাইপার হিসেবে অভিহিত করেছিল স্পেনের কিছু সংবাদমাধ্যম। রুশ বাহিনীকে নিয়ে বিদ্রূপ করার জন্য মার্কিন সমর বিশারদেরাও তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো থেকেও ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ওয়ালি।
ওয়ালি ইউক্রেন যুদ্ধে তাঁর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ইউক্রেনে যাওয়ার পর সেখানকার বাস্তবতা দেখে তাঁর মোহভঙ্গ হয়েছে। কুইবেকে নিজের বাড়িতে বসে দেশটির সংবাদমাধ্যম লা প্রেসেকে গত শুক্রবার ওয়ালি বলেন, ইউক্রেনে গিয়ে যে কমান্ডারের অধীন ছিলেন, সেই কমান্ডার আসলে জানেন না ইউক্রেনে তাঁর মতো আরও যেসব বিদেশি স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে গেছেন, তাঁদের নিয়ে করণীয় কী। লড়াই করার জন্য একটি সুযোগের অপেক্ষায় থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়ার পর ওয়ালি নরমান ব্রিগেডে যোগ দেন।
নরমান ব্রিগেড হলো বেসরকারি একটি সেনা ইউনিট। নরমান ব্রিগেডের নেতৃত্বে আছেন কিউবেকের আরেকজন সাবেক সেনা। তবে নরমান ব্রিগেডের একাধিক সদস্য লাস প্রেসেকে বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম কখনো দেখাননি ব্রিগেডের প্রধান। এমনকি ব্রিগেডের কিছু সদস্য বলেন, আত্মরক্ষামূলক কোনো সরঞ্জাম ছাড়াই তাঁদের সম্মুখসমরে অংশ নিতে হয়েছে।
নরমান ব্রিগেডের প্রায় ৬০ জন্য যোদ্ধা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়েছেন। ব্রিগেড কমান্ডার লা প্রেসেকে বলেন, কিছু সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো পাঁচ লাখ ডলারের অস্ত্র চুরি করে তাঁদের জন্য নতুন একটি ইউনিট খুলেছে।
শেষে রাজধানী কিয়েভের কাছে ইউক্রেনীয় সেনাদের একটি ইউনিটে যোগ দেন ওয়ালি। তবে সেখানে যোগ দিয়েও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। অস্ত্র, খাবার ও জ্বালানিসংকটে পড়েন তিনি। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ওয়ালি লা প্রেসেকে বলেন, ‘আপনাকে এমন একজনকে চিনতে হবে, যিনি এমন একজনকে চিনতেন, যিনি আপনাকে বলেছিলেন কিছু পুরোনো নাপিতের দোকানে তারা আপনাকে একটি একে-৪৭ দেবে। এমনকি মাঝেমধ্যে খাবারও দিত সাধারণ মানুষ।’
অবশেষে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য হলেও জানালায় দুটি গুলি ছুড়েছেন বলে জানান ওয়ালি। দনবাস অঞ্চলে তাঁকে আরও দুজন ইউক্রেনীয় সেনার সঙ্গে পাঠানো হয়। সেখানে রুশ বাহিনীর ট্যাংক ও গোলার নির্ভুল নিশানায় পড়েন তাঁরা। এরপরই দ্রুত বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ওয়ালি বলেন, ‘আমি তাঁদের বলেছিলাম, এভাবে রুশ বাহিনীর মুখে পড়বেন না। কিন্তু তাঁরা আমার কথা শোনেননি। গোলা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আমাদের দিকে ছুটে আসতে দেখেছি। আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমি কিছুই শুনছিলাম না। তাৎক্ষণিক আমার মাথাব্যথা শুরু হয়। পরিস্থিতি ছিল সত্যি সহিংস।’
তবে স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে যাওয়া যোদ্ধাদের মধ্যে ওয়ালির মতো আরও অনেকে অল্প দিনের মধ্যেই দেশে ফিরেছেন। রেডিটের মাধ্যমে ‘ভলান্টিয়ারস ফর ইউক্রেন’ ফোরামের মাধ্যমে যাঁদের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার কথা ছিল এবং যাঁরা ইতিমধ্যে ইউক্রেনে গেছেন, তাঁরাও অনেকটা একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।