ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রে এক শেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির নিহত হওয়ার প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সীমান্ত ছাড়িয়েছে। মার্কিন বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত রোববার ইউরোপের বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডাতেও। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী হত্যার প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছে চীন ও ইরান। বেইজিং বলেছে, বর্ণবাদ যুক্তরাষ্ট্রে যে ‘জটিল ব্যাধি’ সেটাই দেখিয়েছে এই বিক্ষোভ।
জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের বাসিন্দা জর্জ ফ্লয়েডকে (৪৬) গত সোমবার আটক করে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলি শহরের পুলিশ। আটকের পর ডেরেক চৌভিন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে সড়কে চেপে ধরলে তিনি মারা যান। এই প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে পুরো যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়ে রোববার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে জড়ো হন শত শত বিক্ষোভকারী। তাঁরা ‘যেখানে বিচার নেই, যেখানে শান্তি নেই’ বলে স্লোগান দেন। এরপর তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি যুক্তরাজ্যের হাউস অব পার্লামেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় তাঁরা ‘জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিচার চাই’, ‘আমাদের হত্যা বন্ধ করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। করোনাভাইরাসের কারণে আরোপিত লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ওই দূতবাসের বাইরে থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
>যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা
ইউরোপের বিভিন্ন শহরে এবং কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বিক্ষোভে হাজারো মানুষ নেমে আসেন রাজপথে
জার্মানির বার্লিন শহরে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রোববারও বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েড হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড বহন করেন। বিক্ষোভ হয়েছে নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের বেশ কিছু শহরে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী হত্যার প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন পাশের দেশ কানাডার নাগরিকেরাও। টরন্টোসহ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারের দেশ নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন, ক্রাইস্টচার্চের মতো বড় বড় শহরে বিক্ষোভ–প্রতিবাদ হয়েছে। এ সময় তাঁরা ‘একতা’, ‘সংহতি’ ও ‘কালোই শক্তি’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। নিউজিল্যান্ডের প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরেও বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ। সিডনি, ব্রিসবেন ও মেলবোর্নে হয়েছে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। বিক্ষোভে অংশ নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের এই গণবিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে এই বিক্ষোভকে ‘গৃহযুদ্ধের’ সঙ্গে তুলনা করা হয়। জার্মানির শীর্ষ পত্রিকা ব্লিডে রোববার ফ্লয়েড হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এক পুলিশ কর্মকর্তার ছবি দিয়ে শিরোনাম করেছে, ‘এই হত্যাকারী পুলিশ যুক্তরাষ্ট্রে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন’।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী হত্যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া মন্তব্য করছে দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। গতকাল সোমবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক বর্ণবাদ সমস্যা এবং পুলিশের নিপীড়ন ঘটনায় তুলে ধরেছে এই বিক্ষোভ।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ‘শত্রুদেশ’ ইরান বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নিজের জনগণের বিরুদ্ধে ‘নিপীড়ন’ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল তেহরানে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি এই আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার ন্যাশনাল ডিরেক্টর অব রিসার্চ রাচেল ওয়ার্ড গতকাল এই আহ্বান জানান।