পুতিন কি পারমাণবিক অস্ত্র বেছে নেবেন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কখন কী করতে যাচ্ছেন, তা অনুমান করা খুব কঠিন। ব্রিটিশ সাংবাদিক স্টিভ রজেনবার্গ এমনটাই বলেছেন। এখন তিনি মস্কোতে দায়িত্বপালন করছেন।
পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে কতটা ভাবনায় পড়েন, বিবিসির এক প্রতিবেদনে তার মজার উদাহরণ দিয়েছেন স্টিভ রজেনবার্গ। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানিয়েছেন, পুতিনকে নিয়ে তিনি কী ভাবেন, আর কী ঘটে।
‘তিনি (পুতিন) কখনো ক্রিমিয়া দখল করবেন না, নিশ্চিত।’ পুতিন তা করেছেন।
‘দনবাসে পুতিন কখনো যুদ্ধ শুরু করবেন না’। তিনি তা করেছেন।
‘ইউক্রেনে পুতিন হামলা চালাবেন না।’ হামলা চালিয়েছেন।
স্টিভ রজেনবার্গ বলছেন, যখনই ভেবেছেন, পুতিন কখনোই এমন কাজ করবেন না, তখনই ঠিক সেটাই ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছেন রজেনবার্গ। পুতিনের কখনোই এমন কাজ করবেন না, এ ভাবনাই বাদ দিয়েছেন তিনি।
তারপরও স্টিভের মাথায় এখন যে ভাবনা ঘুরছে, তা হলো, পুতিন কখনোই প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন না। করবেন কি?
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নিয়ে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, সেখান থেকে এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে থাকা বাহিনীকে ‘বিশেষ’ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলেছেন। পুতিনের অভিযোগ, ইউক্রেন ইস্যুতে ন্যাটো নেতারা আক্রমণাত্মক বিবৃতি দিচ্ছেন।
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালুর ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় পুতিন একটি সতর্কবার্তাও দেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, বাইরে থেকে কেউ নাক গলাতে চাইলে তাকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, যা ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি।
রাশিয়ার নোভায়া গেজেতা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দমিত্রি মুরাতভ বলেন, পুতিন সেদিন যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি বলা যায়।
দমিত্রি মুরাতভ আরও বলেন, টিভিতে দেওয়া ওই ঘোষণায় পুতিন যেভাবে কথা বলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল, তিনি শুধু ক্রেমলিনের নয়, পুরো বিশ্বের অধিকর্তা। চালক যেভাবে গাড়ি চালানো শুরুর আগে হাতের আঙুলে চাবি ঘোরান, পুতিনও যেন সেভাবেই তাঁর হাতের আঙুলে পারমাণবিক অস্ত্র ঘোরাচ্ছেন। পুতিন অনেকবার বলেছেন, রাশিয়া না থাকলে পৃথিবীর কী প্রয়োজন? কেউই হয়তো পুতিনের কথায় সে সময় ভালোভাবে কর্ণপাত করেননি। তবে এটা ছিল পুতিনের একধরনের হুমকি। আর তা হলো যদি রাশিয়া যা চায়, তা না হয়, তাহলে সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
২০১৮ সালের এক তথ্যচিত্রে পুতিন বলেন, ‘যদি কেউ রাশিয়াকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের জবাব দেওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে। আর এমনটা হলে বিশ্ব ও মানবতার জন্য বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু আমি রাশিয়ার একজন নাগরিক। রাষ্ট্রপ্রধান। রাশিয়া ছাড়া কোনো বিশ্বের আমাদের কী প্রয়োজন?’
গত বৃহস্পতিবার ভোরে পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন। এর পর থেকেই রাশিয়া হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনে। ইউক্রেনের দাবি, রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কিছু নিষেধাজ্ঞা দিতে একমত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠাতে রাজি হয়েছে।
এত সব নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে কি বিপদে ফেলবে? মস্কোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহায়ার বলেন, পুতিন কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করলে ও রাশিয়ায় বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশটি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের হাতে খুব বেশি বিকল্প থাকবে না।
মস্কোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহায়ার বলছেন, এসব নিষেধাজ্ঞা আটকানোর কিছু উপায় রয়েছে পুতিনের। তিনি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারেন। এতে ইউরোপ বিপদে পড়বে। আরেকটি উপায় হলো, তিনি ব্রিটেন ও ডেনমার্কের মধ্যবর্তী নর্থ সিতে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ করতে পারেন।
এখন প্রশ্ন যদি পুতিন দ্বিতীয় উপায়টি বেছে নেন, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বেছে নেন, তাহলে তাঁর মিত্রদের কেউ কি তাঁকে থামাতে পারবে? নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দমিত্রি মুরাতভ বলছেন, রাশিয়ার ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতারা কখনোই জনগণের পক্ষে থাকেন না। তাঁরা সব সময় শাসকের পক্ষে থাকেন। রাশিয়ায় পুতিনের একচ্ছত্র আধিপত্য।
পাভেল ফেলগেনহার বলছেন, ‘পুতিনের পক্ষে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। আমরা বিপদে আছি।’
সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হয় ইউক্রেনের যুদ্ধ আসলে পুতিনের যুদ্ধ। যদি ক্রেমলিনের নেতা তাঁর সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন, তাহলে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আর যদি পুতিন তাঁর লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হন অথবা রাশিয়ায় হতাহত বেড়ে যায়, তাহলে ক্রেমলিন বিপজ্জনক পথে অগ্রসর হবে।
কাজেই পুতিন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন না, কেবল ভয় দেখাবেন, এমনটা বলা কঠিন। তবে স্টিভ রজেনবার্গের অন্য সব ভাবনার মতো এটাও যদি না মেলে, তাহলে তা বিশ্বের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।