নীরবতা ভাঙলেন রানি

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
ছবি : রয়টার্স

ব্রিটিশ রাজপরিবার ছেড়ে যাওয়া হ্যারি-মেগান দম্পতির গত রোববারের সিবিএস নিউজে ‘বোমা ফাটানো’ সাক্ষাৎকার নিয়ে নীরবতা ভাঙল বাকিংহাম প্যালেসের। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, ‘গত কয়েক বছর হ্যারি ও মেগানের জন্য কতটা সমস্যাপূর্ণ ছিল, তা পুরোটা জানতে পেরে পুরো পরিবার দুঃখ পেয়েছে।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বাকিংহাম প্যালেসের বিবৃতিতে বলা হয়, যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে বর্ণবাদের বিষয়টি উদ্বেগজনক। এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।পারিবারিকভাবেই বিষয়গুলো সুরাহা করা হবে।

এর আগে ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টিভিতে প্রচারিত হয় ‘অপরাহ্ উইথ মেগান অ্যান্ড হ্যারি: এ সিবিএস প্রাইমটাইম স্পেশাল’ শিরোনামের বিশেষ সাক্ষাৎকারটি। সেখানে উইনফ্রেকে ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি জানিয়েছেন, রাজপরিবার ছাড়ার পরে কেন যুক্তরাজ্যও ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা। জানিয়েছেন, রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁর ক্রমবর্ধমান দূরত্বের কথাও।


বিবিসির গতকালের খবরে জানা যায়, প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, তাঁর ও স্ত্রী মেগান মার্কেলের যুক্তরাজ্য ছাড়ার পেছনে ট্যাবলয়েড পত্রিকার বর্ণবাদী আচরণ বড় ভূমিকা রেখেছিল। হ্যারির কথায়, ‘যুক্তরাজ্যের ট্যাবলয়েড গণমাধ্যম সংকীর্ণতাবাদী। ট্যাবলয়েড গণমাধ্যমগুলো ভয় এবং নিয়ন্ত্রণের বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করেছিল।’ হ্যারি-মেগান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করছেন। ওই সাক্ষাৎকার প্রচারের পর গতকাল ব্রিটিশ রাজপরিবার এক জরুরি বৈঠকে বসে। এরপরই রাজপরিবারের বিবৃতিটি আসে।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে উইন্ডসর ক্যাসলের পথে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল
ছবি: এএফপি

সাক্ষাৎকারে হ্যারি বলেন, রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার কিছু সময় পরই দ্য সোসাইটি অব এডিটরসের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে, এমন এক ব্যক্তি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানে না যেতে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন। ওই ব্যক্তি হ্যারিকে বলেছিলেন, ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে এমন করবেন না। তারা আপনার জীবন ধ্বংস করে দেবে।’

সাক্ষাৎকারে হ্যারির সঙ্গে একমত পোষণ করে মেগান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গণমাধ্যমের সঙ্গে হঠকারী সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাঁকে (মেগান) ও হ্যারিকে গণমাধ্যমের অসত্য প্রচার থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন রাজপরিবারের সংবাদমাধ্যম ব্যবস্থাপকেরা।

এর আগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেগান। সম্প্রতি সেই মামলায় মেগানের পক্ষে রায় দেন আদালত।

তবে হ্যারি ও মেগানের অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদকদের সংগঠন দ্য সোসাইটি অব এডিটরস। তারা বলেছে, সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়াই রাজদম্পতি এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সংকীর্ণবাদী নয়।

এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হিসেবে এসেছে রাজপরিবারের ভেতর বর্ণবাদের লালন। মেগান জানান, ব্রিটিশ রাজপরিবারের জৌলুশপূর্ণ জীবনে থেকেও তিনি ভালো ছিলেন না। পরিবারের মধ্য থেকেও তিনি এত বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিলেন যে একটা সময় বেঁচে থাকার ইচ্ছাই হারিয়ে ফেলেন। ভাবছিলেন আত্মহত্যা করবেন। রাজপরিবারে মেগানের মানসিক কষ্ট ও তাঁর ছেলে অর্চির জন্মের আগে গায়ের রং নিয়ে বৈষম্যমূলক আলোচনার কথাও বলেন মেগান। তিনি বলেন, সন্তানের গায়ের রং নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন রাজপরিবারের এক সদস্য।

উইনফ্রে গত সোমবার সিবিএসকে জানান, প্রিন্স হ্যারি পরে তাঁকে জানিয়েছেন, সন্তানের গায়ের রং নিয়ে রানি এলিজাবেথ অথবা প্রিন্স ফিলিপ কোনো মন্তব্য করেননি, এটা তিনি নিশ্চিত। এই মন্তব্য রাজপরিবারের কে করেছিলেন, তা জানাননি প্রিন্স হ্যারি।

সাক্ষাৎকারে হ্যারি বলেন, তাঁর ভাই ও বাবা রাজপরিবারের নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেছেন। গত বছরের শুরু থেকে তাঁর পরিবার তাঁকে (হ্যারি) কোনো আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে না। তাঁর বাবা তাঁর ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। হ্যারি বলেন, তিনি ভাইকে ভালোবাসেন। ভাই ও বাবার সঙ্গে আবার সম্পর্ক উন্নত করতে চান। মেগান বলেন, গত মাসে প্রিন্স ফিলিপ হাসপাতালে যখন চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন তিনি রানি এলিজাবেথকে ফোন করেছিলেন।

সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রেস সচিব জেন সাকিও। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক কষ্টের কথা জনসমক্ষে বলে হ্যারি ও মেগান সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। এটাকে তাঁরা উৎসাহের সঙ্গে নিয়েছেন।
ব্রিটিশ রাজপরিবার বর্ণবাদে বিশ্বাস করে কি না—এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, রাজপরিবার নিয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে তিনি সব সময় রানি এলিজাবেথের ভক্ত।

মেগানের সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলেছেন তাঁর বাবা টমাস মার্কেল। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল টমাস বলেছেন, তাঁর মেয়ে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে যে বর্ণবাদের অভিযোগ এনেছেন, সেটা ‘অতিরঞ্জিত’। তিনি মনে করেন না ব্রিটিশ রাজপরিবার বর্ণবাদী।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন