তুরস্ক ও গ্রিসে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৬ এ পৌঁছেছে।
ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। ভূমিকম্পের কারণে সামোস দ্বীপতীরবর্তী অ্যাজিয়ান সাগরে ছোট আকারে সুনামি সৃষ্টি হয়েছে। সাগরে জলোচ্ছ্বাসের কারণে তুরস্কের পশ্চিম উপকূলের একটি শহরে রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে। এএফপির খবরে এ তথ্য জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭। তবে তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এএফএডি) বলেছে, গ্রিনিচ সময় ১১টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট) আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৬।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বলেছে, গ্রিসের সামোস দ্বীপের কারলোভাসি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। ইস্তাম্বুল ও এথেন্সেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের পর চিরশত্রু দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুযোগ তৈরি হয়েছে। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
তুরস্কের অ্যাজিয়ান সাগরতীরবর্তী পর্যটন এলাকা ইজমিরে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে সুউচ্চ ভবন রয়েছে। ভূমিকম্পে অনেক ভবন ধসে গেছে। ইজমিরের রাস্তায় ভবনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের খেলনা, বালিশ।
ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী গোখান কান (৩২) বলেন, ‘মনে হচ্ছিল সব কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? প্রায় ১০ মিনিট ধরে ভূমিকম্প চলেছে। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প আর শেষ হবে না। তখন নিজের জন্য নয়, বেশি ভয় পেয়েছিলাম আমার স্ত্রী আর চার বছরের ছেলের জন্য।’
ইজমিরের মেয়র তুনস সয়ার সিএনএনকে (তুর্কি) জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ২০টি ভবন ধসে গেছে। ধসে পড়া ১৭টি ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ত্রাণ সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পে ২৪ জন নিহত হয়েছে ও প্রায় ৮০০ জন আহত হয়েছে। গ্রিসের সামোস দ্বীপে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুই কিশোর দেয়ালচাপায় নিহত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
ভূমিকম্পে গৃহহীনদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে তুরস্কের মসজিদগুলোতে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, ইজমিরের রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার বেশির ভাগ এলাকায় সাদা ধোঁয়ায় ভরে গেছে। বড় বড় ভবনগুলো ধসে পড়েছে।
উদ্ধারকর্মীদের কাজে সাহায্য করছেন স্থানীয়রা ও শিকারি কুকুর। আরেকটি জায়গায় কৃষিমন্ত্রী বেকির পাকডিমিরলিকে দেখা গেছে ফোনে কথা বলতে। তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া এক মেয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন।
টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, মেয়েটিকে তিনি শান্ত থাকতে বলছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কংক্রিট সরানোর চেষ্টা করছি। তোমার কাছে শিগগিরই পৌঁছাতে পারব।’এনটিভি টেলিভিশনের খবরে জানা যায়, ধ্বংসস্তূপে ছয়জন আটকে আছেন।
ওই এলাকার গভর্নর জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তবে ঠিক কতজন নিখোঁজ তা জানা যায়নি।
সামোস দ্বীপে অস্থিরভাবে সবাইকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। ডেপুটি মেয়র গিওরগোস ডিওনিসিয়াস বলেন, এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের আগে কখনো হয়নি।
গ্রিসের নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা সামোসের বাসিন্দাদের খোলা জায়গায় এবং ভবন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় গ্রিস ও তুরস্ক অবস্থিত। ন্যাটোর সামরিক জোটের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশী দুই দেশ চিরশত্রু।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী টুইটে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যত মতবিরোধই থাক এটাই একসঙ্গে থাকার সময়।’ এরদোয়ান টুইটে প্রতি উত্তরে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, কঠিন সময়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সংহতি খুবই মূল্যবান।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দুই দেশের নতুন সম্পর্কে ওয়াশিংটন আনন্দিত।
১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর পশ্চিমে ৭.৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এতে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। এর মধ্যে এক হাজার মানুষ ছিল ইস্তাম্বুলের। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে গ্রিসে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে।