দুই হাজার বছরের পুরোনো ফাস্ট ফুডের দোকানের সন্ধান

ইতালির প্রাচীন শহর পম্পেইয়ের ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রত্নতাত্ত্বিকদের আবিষ্কার।ছবি: রয়টার্স

ইতালির প্রাচীন শহর পম্পেইয়ের ছাইয়ের স্তূপ থেকে দুই হাজার বছরের পুরোনো ফাস্ট ফুডের দোকান আবিষ্কার করা হয়েছে। এই দোকান থেকে প্রাচীন রোমানদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।


এএফপির খবরে জানা যায়, দোকানের স্ন্যাক্সের কাউন্টারটি পলিক্রম নকশায় (বিভিন্ন রঙের ইট দিয়ে সাজানো নকশা) সজ্জিত। আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে ঢাকা ছিল এ দোকান। গত বছর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এর আংশিক খুঁড়ে বের করেন। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা প্রাচীন নিদর্শন বের করে আনতে খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভিসুভিয়াস পর্বতের আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভার নিচে চাপা পড়ে পম্পেই নগরী। এতে ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ওই এলাকায় আবিষ্কারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।


ফাস্ট ফুডের ওই দোকানগুলোকে বলা হতো ‘থার্মোপোলিয়াম’। গ্রিক শব্দ ‘থার্মোর’ অর্থ গরম আর ‘পোলেও’ শব্দের অর্থ বিক্রি। অর্থাৎ গরম জিনিস বিক্রির জায়গা থার্মোপোলিয়াম। পম্পেই নগরের ওয়েডিং স্ট্রিট ও অ্যালে অব ব্যালকোনিজের নামের দুই এলাকার মাঝামাঝি জায়গায় ছিল এই গরম খাবারের দোকানের অবস্থান।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের দল ফাস্ট ফুডের ওই দোকানে হাঁস, শূকর, ছাগলের হাড়ের টুকরো খুঁজে পেয়েছেন। মাটির পাত্রে পেয়েছেন মাছ ও শামুক। এগুলোর মধ্যে কিছু উপাদান রোমান যুগের খাবার ‘পেলার’ মতো একসঙ্গে রান্না করা হয়েছিল।


একটি জারের তলায় গুঁড়ো করে রাখা মটরশুঁটি পাওয়া গেছে। ওয়াইনের স্বাদ বাড়াতে এগুলো ব্যবহৃত হতো।

পম্পেইয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক পার্কের মহাপরিচালক মাসিমো ওসানা রোমের এএনএসএ সংবাদ সংস্থাকে জানান, দোকানটি খুব তড়িঘড়ি করে বন্ধ করা হয়েছিল। সম্ভবত অগ্ন্যুৎপাতের প্রথম দিকে এটি বন্ধ করা হয়।

ইতালির প্রাচীন শহর পম্পেইয়ের ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রত্নতাত্ত্বিকদের আবিষ্কার।
ছবি: রয়টার্স


ফাস্ট ফুডের দোকানটির কাছে একটি ঝরনা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৫০ বছরের এক ব্যক্তির দেহাবশেষ ও শিশুর বিছানা পাওয়া গেছে। ওসানা এএনএসএ সংবাদ সংস্থাকে বলেন, সম্ভবত দোকানের পেছনে বয়স্ক কোনো ব্যক্তি বসবাস করতেন। অগ্ন্যুৎপাত শুরুর পর তিনি মারা যান।


আরেকজন মানুষেরও দেহাবশেষ পাওয়া গেছে বলে জানান ওসানা। সম্ভবত তিনি ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে কোনো জিনিস চুরি করে পালাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে দোকানের একটি পাত্রের ঢাকনা ছিল।


প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বুনো হাঁস, পোষা মোরগের প্রতিকৃতি আবিষ্কার করেছেন। ধারণা করা হয়, ওয়াইন অথবা গরম পানীয়র সঙ্গে এগুলোর মাংস দিয়ে তৈরি খাবার পরিবেশন করা হতো।


পম্পেই ইতালির দ্বিতীয় পর্যটন এলাকা। গত বছর ৪০ লাখ পর্যটক সেখানে যান। এটি রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম ধনী এলাকা ছিল। অগ্ন্যুৎপাতের ছাইয়ের স্তূপের নিচে চাপা পড়ে অনেক ভবন ও জিনিস।