মার্কিন গোয়েন্দারা সতর্ক করে বলছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে জয় লাভ করলেও এই সংঘাত শেষ হবে না। বিবিসির এক খবরে বলা হয়, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই মার্কিন গোয়েন্দারা এই সতর্কতার কথা জানালেন।
ইউক্রেনের সেনারা রাজধানী কিয়েভ দখলের চেষ্টা প্রতিহত করার পর মস্কো দনবাস অঞ্চল দখলে তাঁদের লক্ষ্য নির্ধারণের কথা জানান। তবে তা সত্ত্বেও মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলেও রুশ বাহিনী অচলাবস্থায় রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক এভ্রিল হেইনস গত মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেছেন, পুতিন এখনো দনবাসের বাইরে তাঁর লক্ষ্য অর্জনের ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে তিনি তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং রাশিয়ার বর্তমান প্রচলিত সামরিক সক্ষমতার মধ্যে মিল পাচ্ছেন না।
হেইনস আরও বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট সম্ভবত ইউক্রেনকে দুর্বল করতে মার্কিন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনের বিষয়গুলোর দিকে নজর দিচ্ছেন। কারণ, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যঘাটতি এবং জ্বালানির দাম আরও বাজে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
তবে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে রুশ প্রেসিডেন্ট আরও কঠোর পথ বেছে নিতে পারেন বলেও সতর্ক করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক। তিনি আরও বলেছেন, রাশিয়ার জন্য অস্তিত্বের হুমকি হলেই কেবল মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে।
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক স্কট বেরিয়ার একই শুনানিতে বলেছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সেনারা কিছুটা অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছেন। সর্বশেষ লড়াইয়ে ইউক্রেন উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের চারটি এলাকা পুনর্দখল করার দাবি করেছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী দাবি করেছে, তারা চেরকাসি টাইশকি, রুস্কি টাইশকি, রুবিঝনে এবং বায়রাককে রাশিয়ার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের সাফল্য ক্রমান্বয়ে রুশ বাহিনীকে খারকিভ থেকে বের করে দিচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে খারকিভে বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।
ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘তবে আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই...যাতে অতিমাত্রায় আবেগ ছড়ানো না হয়। আমাদের অতিমাত্রায় নৈতিক চাপ দেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত হবে না, যেখানে প্রতি সপ্তাহে এবং প্রতিদিন বিজয় প্রত্যাশিত হয়ে দাঁড়ায়।’
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, খারকিভ এই যুদ্ধে নতুন ধাপের ইঙ্গিত হতে পারে, ইউক্রেনীয় বাহিনী এখন পাল্টা হামলা চালাতে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ বাহিনী ব্যাপক হামলা চালিয়েও সেখানে সাফল্য পায়নি।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে খারকিভের উপকণ্ঠ দখল করে নেয় রুশ বাহিনী। তাদের পিছু হটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইউক্রেনীয় বাহিনী পেছনের সরবরাহ লাইনে আঘাত হানতে যাচ্ছে। এই সরবরাহ লাইন আরও দক্ষিণে থাকা রাশিয়ার মূল আক্রমণকারী বাহিনীকে টিকিয়ে রেখেছে।
লন্ডনের চিন্তক প্রতিষ্ঠান রুসির নিল মেলভিন বলেন, ‘ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সীমান্তের দিকে এগোচ্ছে। ফলে শুরুর দিনগুলোতে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর যত অর্জন, সেগুলো ক্রমেই হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার পাশাপাশি উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে স্থল অভিযান শুরু করে রাশিয়া। পরে পশ্চিমা অস্ত্রে সমৃদ্ধ ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে উত্তর দিক থেকে সেনা সরিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করে রুশ বাহিনী।
এদিকে ইউক্রেনকে আরও চার হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।
চার রুশ গভর্নরের পদত্যাগ
রয়টার্স জানায়, রাশিয়ার চারজন আঞ্চলিক গভর্নর মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। টমস্ক, সারাতভ, কিরভ ও মারি এল অঞ্চলের প্রধানেরা তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া রায়াজান অঞ্চলের প্রধান আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। রাশিয়ার এই পাঁচ অঞ্চলে আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। পাঁচটির মধ্যে চারটি অঞ্চলের প্রধান এমন এক সময় পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন, যখন ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পশ্চিমাদের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রাশিয়ার অর্থনীতিতে পড়তে যাচ্ছে। রাশিয়ায় সাধারণত অজনপ্রিয় গভর্নরদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে দেখা যায়। কিন্তু এখন গভর্নরদের নিজে থেকে পদত্যাগ করতে দেখা গেল। রাশিয়ার আঞ্চলিক গভর্নররা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তবে তাঁরা রাজনৈতিকভাবে ক্রেমলিনের অধীন।